তাড়াহুড়োর নির্বাচন নয়, আগে সংস্কার চায় রাজনৈতিক দলগুলো
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার চেয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাড়াহুড়ো না করে এই সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চায় দলগুলো।
শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আলাদাভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দেয় রাজনৈতিক দলগুলো। পরে মতবিনিময় শেষে যমুনার গেটে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি তাদের প্রস্তাবনার কথা সাংবাদিকদের জানান।
মতবিনিময় সভা শেষে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমির (চরমোনাই পীর) সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, সুন্দরভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনসহ সর্বত্র দেশ সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে আমরা পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা বলেছি এই সমস্ত জায়গাগুলোতে সুন্দর, স্বচ্ছ একটা পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন দিলে আগের সেই ধারাটাই বাস্তবায়নের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার প্রায় ১৬ বছর পর্যন্ত সর্বত্র দলীয়করণ করে ২০১৪, ১৮ এবং ২৪ এর প্রহসনমূলক নির্বাচন করেছে এবং এসব নির্বাচনগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে যারা দায়িত্ব পালন করেছে; বিভিন্ন মিডিয়ার যারা সহযোগিতা করেছে অন্যায়ভাবে; একটা নির্ভরযোগ্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে অন্যায়কারীদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চাই। যৌক্তিক সময় বলতে যখনই পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এটা আজকে, কালকে, ৬ মাস বা ১ বছর পরেও হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা সংস্কার চেয়েছি, এখানে কোনো দুর্নীতি থাকবে না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন যখন গড়তে পারবে, মানুষ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে, ভোট দিতে পারবে এ রকম পরিবেশ যখনই সৃষ্টি হবে তখনই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
অন্তর্বর্তী সরকারকে কতটা সময় দিতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণ ‘অস্থির’ হওয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টাকে নির্বাচন দিতে বলেছেন তারা।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক জানান, তারা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ৬টি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছে। প্রত্যেকটি দল যার যার পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে।
মামুনুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা সহযোগিতা করার প্রত্যয় জানিয়েছি। নির্বাচন ও প্রশাসনসহ প্রত্যেকটা খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছি।
যৌক্তিক সময় নিয়ে সংস্কারের কাজ করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি এই আশা ব্যক্ত করে মামুনুল হক বলেন, অযথা কাল বিলম্ব না করে যেন নির্বাচনের আয়োজন করেন। সে বিষয়ে বলেছি। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে কাল বিলম্ব না করে তারাও নির্বাচনের দিকে যেতে আগ্রহী।
লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, সংস্কারের আগে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন হওয়া বাঞ্ছনীয় না। আগে সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা হাসিনার পদলেহী ছিল তারা এখনো চাকরিচ্যুত হয় নাই, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কোনো তদন্ত শুরু হয় নাই, একজন লোককে শুধু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি করলে সমস্যার সমাধান হবে না। যারা প্রকৃত পক্ষে দোষী, দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু তাদের জেলে ঢুকাতে হবে, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, পুলিশ সংস্কার একটা বড় কাজ। রাষ্ট্রের জন্য পুলিশকে তৈরি করা। কালো আইন বাতিল করতে হবে। পুরো বিচার ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংস্কার করে তারপর নির্বাচন। এ জন্য যেটুকু সময় লাগে সেটুকু সময় জাতীয় পার্টি সমর্থন করে।
সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দেশের প্রশাসন বিচার বিভাগ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্বাচিত সরকার হলে সেই (সংস্কার) কাজগুলো করতে চায় না। আমাদের চেয়ারম্যান বলেছেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন আছে।
নির্বাচন ছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলো ৫ মে ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ সম্প্রতি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের সহায়তা; বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিসহ বিভিন্ন দাবি করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (আগস্ট ২৯) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ সাক্ষাৎ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দীন আহমেদ। সেখানে তারা দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী সংলাপ শুরু করার অনুরোধ করেন।