তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে গবেষকদের শঙ্কা, কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের পরামর্শ
আগামীতেও অতি উষ্ণ গ্রীষ্মকাল চলমান থাকলে এটি মোকাবিলায় করার জন্য অন্যান্য দুর্যোগের মতো পূর্বপ্রস্তুতি লাগবে। আর এই তাপপ্রবাহের আওতায় ৭০ শতাংশ মানুষই পড়বে বলে অনেকেই কৃত্রিম বৃষ্টি-ক্লাউড সিডিংয়ের কথা বলছেন। তবে এক্ষেত্রে বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু গবেষকেরা। এটি না হলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এপ্রিলে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহ থাকছে মে মাসেও। এরই মধ্যে এক মাসে দেশের গড় তাপমাত্রা প্রথমবার উঠেছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ৭৬ বছরেও এত দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহের রেকর্ড নেই। উত্তর-পশ্চিমদিক দিয়ে ঢোকা এই তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রায় সব জেলায়। এতে উচ্চ ঝুঁকিতে ২১ জেলার মানুষ। এই অতি উষ্ণ গ্রীষ্মকাল যদি প্রতি বছর আসে তবে তা মোকাবিলায় লাগবে পূর্বপ্রস্তুতি। সে প্রসঙ্গেই সামনে এসেছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত-ক্লাউড সিডিংয়ের প্রসঙ্গ।
এ নিয়ে আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এ প্রক্রিয়ায় সিলভার ও পটাশিয়াম আয়োডাইড ও কঠিন কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। তাই বাংলাদেশে ক্লাউড সিডিং করতে গেলে চীনে ব্যবহৃত প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
জ্যেষ্ঠ এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলে যদি ক্লাউড সিডিংয়ে মাধ্যমে বৃষ্টিপাত ঘটান হয়, তাহলে তার বিরূপ প্রক্রিয়ার জন্য গবেষণা করতে হবে। ক্লাউড সিডিংয়ের ক্ষেত্রে চীন সবসময় এই কাজ করে থাকে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, তার গ্রহণযোগ্যতা, ভেরিফিকেশন এবং যাচাইকরণের ক্ষেত্রে তাদের (গবেষকদের) সঙ্গে আমাদের বসা উচিত।’
এদিকে এর বিপদের দিকটিও সামনে আনছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর আগে গাঙ্গেয় এই বদ্বীপ অঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর কী প্রভাব তা আগে খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া সস্তা ও বেশি কার্যকর বলে এতে সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণ ব্যবহার করা হয়, যা পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, প্রাকৃতিক তুলনায় এটি খুব অল্প এবং কার্যকর হয় না। এ ছাড়া এর জন্য অনেক খরচ হয়। আবার কি দিয়ে বৃষ্টিটা করতেছেন সেটাও অনেক সময় নির্ভর করে। যেমন এক সময় বলা হতো সালফার অক্সাইড। কিন্তু সেটার আবার অন্য ইফেক্ট আছে। যার ফলে ক্লাউড সিডিং নিয়ে আমার মনে হয় এই মুহূর্তে বাংলাদেশের চিন্তা করা উচিত।’
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ‘প্রকৃতিকে আরও খোঁচাখুঁচি করে, বিরক্তির মধ্য দিয়ে প্রকৃতি তোষণ হয় না, তার বিপরীতে প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়। এরকম একটা চিন্তা আমরা ক্লাউড সিডিংয়ে মতো চিন্তা থেকে আমরা অনেক দূরে থাকতে চাই।’