অর্থনীতি

তৈরি পোষাক ছাড়া বাকি সব খাতে রপ্তানি কমেছে

বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে দেড় ও ৬ শতাংশ। পণ্য রপ্তানিতে উদীয়মান দেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি কমেছে ১১ শতাংশের বেশি। তৈরি পোশাক ছাড়া সব বড় খাতগুলোর রপ্তানিই কমে গেছে এসব দেশে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের পণ্য রপ্তানিতে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই ইতিবাচক ধারার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ভারতে রপ্তানি কমে যাওয়ায় রপ্তানি খাত নিয়ে একধরনের দুশ্চিন্তা রয়েছে বলে মনে করেন রপ্তানিকারকেরা। তাদের মতে, তৈরি পোষাক ছাড়া বড় খাতের রপ্তানি কমে যাওয়ায় সেই দুশ্চিন্তা বেড়েছে। তবে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রপ্তানি কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৪৯১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি এবং ভারতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াই আসলে রপ্তানি খাতের প্রকৃত চিত্র। অন্য শীর্ষ দেশগুলোতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির বিষয়টি বোধগম্য নয়।

ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ বলেন, ‘ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট পণ্য রপ্তানি আয়ের ৭৪ শতাংশ শীর্ষ ১০ দেশ থেকে এসেছে। এই ১০ দেশের মধ্যে ৭টিতে অবশ্য রপ্তানি বেড়েছে। দেশগুলো হচ্ছে স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, জাপান ও কানাডা। ‘

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট পণ্য রপ্তানির সাড়ে ১৭ শতাংশের গন্তব্য ছিল এই বাজার। রপ্তানি হয়েছিল ৯৭০ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও এই বাজারে নেতিবাচক ধারা থেকে বেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশটিতে ২২৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৫২ শতাংশ কম।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সামগ্রিক রপ্তানি কমলেও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। গত অর্থবছর এই বাজারে মোট পণ্য রপ্তানির ৮৭ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এটি ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই সময়ে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।

এদিকে পণ্য রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ গন্তব্য জার্মানির বাজারেও গত অর্থবছর রপ্তানি কমেছিল ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। সেটি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও অব্যাহত রয়েছে। এই সময়ে দেশটিতে ১৫৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম।

জার্মানিতে মোট পণ্য রপ্তানির ৯৪ শতাংশই তৈরি পোশাক। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই বাজারে ১৪৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। এই বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি পণ্য হোম টেক্সটাইল। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটিতে ২ কোটি ১৪ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম।

পণ্য রপ্তানিতে মাত্র কয়েক বছর আগে উদীয়মান নতুন বাজার হিসেবে আবির্ভূত হয় ভারত। করোনার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো এই বাজারে শতকোটি ডলার রপ্তানির মাইলফলকে পৌঁছায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ৬ নম্বর গন্তব্য এখন ভারত। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বাজারে রপ্তানি হয়েছে ২১২ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। যদিও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই বাজারে রপ্তানি কমেছে। এই সময়ে ৫৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১ হাজার ১৬২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। পোশাক রপ্তানি বাড়লেও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি এবং উদীয়মান বাজার ভারতে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াই আসলে রপ্তানি খাতের প্রকৃত চিত্র। অন্য শীর্ষ দেশগুলোতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ভারতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটিই যুক্তিযুক্ত।’

ফজলুল হক বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের যতটুকু ক্রয়াদেশ পাওয়া যাচ্ছে, তা নেওয়ার পাশাপাশি যথাসময়ে উৎপাদন করে জাহাজীকরণের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিশ্চিত করা দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d