আইন-আদালতচট্টগ্রাম

থানায় নিয়ে চাঁদা-চেক আদায়, তিন পুলিশসহ ৫ জনের নামে মামলা

সাদা পোশাকে তুলে থানায় নেওয়া হয় এক মাদরাসা শিক্ষককে। এরপর তাকে ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে প্রাণে মারার ভয়ভীতি দেখান। ভয়ে ধারে ওই পুলিশ সদস্যদের এনে দেন এক লাখ টাকা। তাতেও রেহাই মিলেনি। আরও টাকা দাবি করেন তারা। পরে ইসলামী ব্যাংকের দেড় লাখ টাকার খালি স্ট্যাম্পেও সই দিয়ে কোনোমতে ফিরে আসেন ওই মাদ্রাসা শিক্ষক। তবে শুনে আসেন ঘটনা কাউকে বললে মামলায় ফাঁসবার হুংকার।

এমনকাণ্ডের অভিযোগে খুলশী থানার দুই উপ-পরিদর্শক ও এক সহকারী উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জাহান জিনিয়ার আদালতে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ওই শিক্ষক তিন পুলিশসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আদালত অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন, নগরের খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমিত বড়ুয়া, ইকবাল বিন ইউসুফ ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. এমদাদ এবং নগরের খুলশীর আমবাগান এলাকার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর ও মো. ইয়াসিনকে।

মামলার বাদী আজিজুল হক নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার জালালাবাদ তালিমুল কোরবান বড় মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি ওই মাদরাসার স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকায়।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার পরিচিত মো. তৌফিকের কাছ থেকে গত ৭ এপ্রিল ৪০ হাজার টাকা দিয়ে একটি এয়ারকন্ডিশন (এসি) কেনেন। কিন্তু বিদ্যুতের সমস্যার কারণে সেটি চালু করতে পারেননি। পরে তিনি ওই এসি তৌফিককে ফেরত দিতে চান। তিনি সেটি নিতে দেরি হবে বলায় তার আরেক পরিচিত গোলজার বাবুর মাধ্যমে সেই এসিটি একটি দোকানে বিক্রির জন্য পাঠান। তখন গোলজার বাবু খুলশী থানার আমবাগান এলাকার জাহাঙ্গীর ও ইয়াসিনের মালিকানাধীন উত্তরা রেফ্রিজারেটর নামক দোকানে এসিটি বিক্রির জন্য নিয়ে যায়।

ওই দোকানের লোকজন দাবি করেন, তাদের দোকান থেকে সম্প্রতি চুরি হওয়া কয়েকটি এসির মধ্যে এটিও আছে। তখন বাদী আজিজুল হককেও সেই দোকানে ডেকে নেন গোলজার বাবু। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে জাহাঙ্গীর, ইয়াছিন ও তাদের কর্মচারীরা আজিজুলকে মারধর করেন।

এরইমধ্যে সেখানে সাদাপোশাকে হাজির হন খুলশী থানার এসআই সুমিত বড়ুয়া ও এএসআই এমদাদ। তারা আজিজুলকে পুলিশের গাড়িতে করে থানায় নিয়ে আসেন। এরপর থানা হাজতে নিয়ে আজিজুলকে মারধর করেন তারা।

ওইদিন রাতেই বাদীকে থানায় আটকে রেখে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে এএসআই এমদাদ আড়াই লাখ টাকা নগদ দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে প্রস্তাব দেন আজিজুলকে। পরে বাধ্য হয়ে ৮ এপ্রিল রাত ১টার দিকে আজিজুলের এক বন্ধু এক লাখ টাকা এনে পাঁচ আসামির উপস্থিতিতেই এএসআই এমদাদকে দেন।

এতেও তারা থেমে থাকেননি। বাকি দেড় লাখ টাকার জন্য আজিজুলকে নির্যাতন করতে থাকেন তারা। পরে ইসলামী ব্যাংকের দেড় লাখ টাকার একটি চেকও দেওয়া হয় পুলিশ কর্মকর্তাদের। পরে তারা খালি স্ট্যাম্পেও সই নেন। এই ঘটনা কাউকে বললে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। পরে চেকটি ফেরত চাইলে তারা দেননি। এক লাখ টাকার কথা বললে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীর আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, আদালত বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

এ প্রদঙ্গে জানতে খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমিত বড়ুয়াকে একাধিকবার কল করা হলেও তার মুঠোফোনের সংযোগ পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, সৌদিফেরত এক প্রবাসীর ১৬ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় গত ১৯ মে খুলশী থানার উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুমিত বড়ুয়া। বারবার একই থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ঘটা এমন সব বিব্রতকর ঘটনায় নগরজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d