চট্টগ্রাম

দুই বছরের জায়গায় ১১ বছরেও স্থায়ী হননি ৮০ প্রভাষক

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত (চসিক) কলেজগুলোতে ২০১৩ সালে নিয়োগ দেওয়া হয় ৮০ জন প্রভাষক। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভাসহ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হয় তাদের। নিয়ম অনুযায়ী, এসব অস্থায়ী শিক্ষককে দুই বছরের মধ্যে স্থায়ী করার কথা। কিন্তু ১১ বছর পেরুলেও স্থায়ী করা হয়নি তাদের। অথচ নিয়োগের পর বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করা তিনজন মেয়রসহ চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্র্তারা স্থায়ীকরণে আশ্বাসও দেন।

এ অবস্থায় চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে কঠোর কর্মসূচি সামনে রেখে আন্দোলনে নামছেন ওইসব শিক্ষক। এর অংশ হিসেবে গত ১৯ আগস্ট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্র্তাকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এছাড়া গতকাল রোববার টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে পালন করেন অবস্থান কর্মসূচি। এরই ধারাবাহিকতায় আজও নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার কথা রয়েছে। এরপরও স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নেওয়া না হলে কর্মবিরতিসহ আরো কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। অস্থায়ী শিক্ষকরা বলছেন, তাদের নিয়োগের পর চসিক ৫টি কলেজকে আত্তীকরণ করে এবং আত্তীকরণকৃত কলেজসমূহের প্রায় ৮০ জন শিক্ষককে স্কেল প্রদানসহ স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে যাবতীয় সুযোগ–সুবিধা প্রদান করা হয়। এছাড়া তাদের নিয়োগের পর এনটিআরসিএ থেকে শূন্য পদে প্রভাষক নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং এর মধ্যে ৪ জন প্রভাষককে স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু ১১ বছর ধরে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের।

‘বঞ্চিত’ শিক্ষকরা বলছেন, চসিকের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল পদ উন্মুক্ত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। কোনো পদ সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্পোরেশন কর্তৃক নিযুক্ত বাছাই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। এই বিধিমালা মেনে তাদের নিয়োগ হওয়ার পরও তাদের কোনো দায়িত্ব না নিয়ে সিটি কর্পোরেশন আত্তীকরণ করা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও এনটিআরসি থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের স্কেল প্রদান করেছে।

অস্থায়ী শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, তাদের নিয়োগটা জেনুইন। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু অর্গানোগ্রামে পদ না থাকায় স্থায়ী করতে সমস্যা হচ্ছে। অতীতে যাদের স্থায়ী করা হয় তা অর্গানোগ্রামের আলোকে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রও ছিল।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, চসিক পরিচালিত কলেজ আছে ২৩টি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত কলেজের জনবল কাঠামো অনুসারে এসব কলেজে ৩৮০টির অধিক পদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১৬৯টি পদে সহকারী অধ্যাপক এবং ৯৫টি পদে স্থায়ী প্রভাষকরা কর্মরত। বাকি ১১৬ পদের মধ্যে ২০১৩ সালে নিয়োগ হওয়া শিক্ষকদের ৫৪ জন কর্মরত। ২০১৩ সালে ৮০ জন নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে ২৬ জন চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত ৩৮০ পদের বিপরীতে শূন্য থাকা পদগুলোতে তাদের (অস্থায়ী ৫৪ জন) স্থায়ী করার সুযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের পর বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও সেগুলো নিয়ম মেনে অর্থাৎ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

অস্থায়ী কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, দীর্ঘ ১১ বছর ধরে নির্ধারিত বেতনে চাকরি করছেন তারা। স্থায়ী না করায় তারা মর্যাদা ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এদিকে বিভিন্ন সময়ে স্থায়ী করার দাবিতে চসিকে দেওয়া পত্রে তারা দাবি করেছেন, তাদের নিয়োগ সিটি কর্পোরেশন ও সরকারের সকল বিধি মেনে সম্পন্ন হয়। নিয়োগ বোর্ডে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ ছিলেন। নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত, মৌখিক পরীক্ষাসহ সনদপত্রের (ফলাফলভিত্তিক) জন্য প্রাপ্ত নম্বরের সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ যাচাই–বাছাই ও বিচার বিশ্লেষণ করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।

এদিকে চসিককে ইতোপূর্বে দেওয়া একটি স্মারকলিপিতে অস্থায়ী শিক্ষকরা দাবি করেন, ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৯৪ জন এবং একই বছরের ৩০ জুলাই ৬৩ জন প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। পদোন্নতির পর শূন্য হওয়া প্রভাষক পদে তাদের স্থায়ীকরণের জন্য বিবেচনা করার সুযোগ আছে।

অবস্থান কর্মসূচি : বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা এগারো বছর বঞ্চনার শিকার দাবি করে স্কেল প্রদান ও বৈষম্যের প্রতিবাদে গতকাল টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। এ সময় শিক্ষকরা বলেন, এগারো বছর বিধি মোতাবেক সুযোগ–সুবিধা প্রদান না করে নতুন নতুন কলেজ আত্তীকরণ করে স্থায়ীকরণ এবং কর্পোরেশনের সুযোগ–সুবিধা গ্রহণ না করার শর্তে এনটিআরসিএ থেকে যোগদানকৃত প্রভাষকদের বিধি বহির্ভৃতভাবে স্কেল প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা নিজ সন্তানের চেয়ে দত্তক নেওয়া সন্তানের প্রতি অধিক দায়িত্বশীল আচরণের মতো। তারা অবিলম্বে বিধি মোতাবেক নিয়োগকৃত শিক্ষকদের স্কেল প্রদানের দাবি জানান এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d