চট্টগ্রাম

নগরীতে উধাও চিড়া-মুড়ি-ডিম

অতিবৃষ্টি ও উজানের পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীসহ বিভিন্ন এলাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কোথাও কোথাও ভেঙে আলাদা হয়ে গেছে সড়ক, কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দের। দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। আর তাতে বন্দরনগরীতে ধসে পড়েছে চিড়া, মুড়ি, ডিম ও কাঁচা পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা।

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা রবিউল হাসান শাফি বলেন, ‘শুকনো খাবার হিসেবে চিড়া-মুড়ি বেশ জনপ্রিয় ও সহজে খাওয়া যায়। তাই ত্রাণের প্যাকেটে চিড়া-মুড়ি দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও চিড়া পাচ্ছি না এখন। মুড়িও পাওয়া যাচ্ছে না, তবে অনেক খোজাখুঁজির পর খাতুনগঞ্জে কিছু মুড়ি পাওয়া গেছে।’

গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অধিকাংশ দোকানে চিড়া-মুড়ি ও ডিম পাওয়া যায়নি। মূল বাজারগুলোর বাইরে কিছু কিছু অলিগলিতে হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে চিড়া-মুড়ি পাওয়া গেলেও বাড়তি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব দোকানে প্রতিকেজি চিড়া ৭০ টাকা ও প্রতিকেজি মুড়ি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এর বাইরে অধিকাংশ দোকানে ডিম পাওয়া না গেলেও সন্ধ্যায় কিছু কিছু এলাকায় কয়েকটি ভ্যানে ডিম সরবরাহ করতে দেখা গেছে। এসব ডিমের প্রতিপিস ১৫ টাকা দরে খুচরায় বিক্রি করেছেন বিক্রেতারা। এর বাইরে কাঁচা বাজারগুলোতে সবজির পরিমাণও ছিল তুলনামূলক কম। এরমধ্যে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৪০০-৬০০, বরবটি ১২০, করলা ১০০, পটল ৮০, পেঁপে ৬০, লাউ ৬০, বেগুন ৮০, টমেটো ৩৫০-৪০০, চিচিঙ্গা ৮০ এবং ঝিঙে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রাম থেকে ব্যক্তি ও সাংগঠনিকভাবে শত শত গাড়ি ত্রাণ গেছে বন্যা কবলিত এলাকায়। এসব ত্রাণের মধ্যে শুকনো খাবার হিসেবে ছিল চিড়া-মুড়ি। আবার বন্যায় মহাসড়কের ক্ষয়ক্ষতি ও দীর্ঘ যানজটের কারণে মালবাহী যান প্রবেশ করছে না চট্টগ্রাম। এতে ত্রাণের প্যাকেটে শুকনো খাবার হিসেবে থাকা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য চিড়া-মুড়ির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি সংকট তৈরি হয়েছে নগরে।

রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সালামত আলী বলেন, পণ্যবাহী গাড়ি আসতে পারছে না। তবে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত পরিমাণ মজুদ আছে। তাই তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু কাঁচা পণ্য ও চিড়া-মুৃড়ির মতো কিছু কিছু পণ্য বাহির থেকে আসে। সেসবের সংকট তৈরি হয়েছে। দামও বেড়েছে।’

এদিকে শীত মৌসুম ছাড়া অন্যান্য সময় উত্তরবঙ্গ ও বিদেশি সবজির ওপর নির্ভরশীল পুরো চট্টগ্রাম। আর সরবরাহ ব্যবস্থায় ধসের কারণে কাঁচা পণ্যেরও সংকট তৈরি হয়েছে। এতে প্রায় ফাঁকা হয়ে যায় নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, পাহাড়তলী ও আতুরার ডিপোসহ প্রায় সবগুলো আড়ত। সবজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ কাঁচা বাজারে। এতে নগরে সবজির সংকট তৈরি হলে দাম বেড়ে যায় কাঁচা মরিচসহ অধিকাংশ সবজির। তবে গতকাল নগরে সবজিবাহী কয়েকটি ট্রাক প্রবেশ করলেও আড়তদাররা বলছেন সেসব সবজি বন্যায় আটকে ছিল চারদিন। এতে অধিকাংশ সবজিই পচে গেছে।

রিয়াজউদ্দিনবাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ফারুক শিবলী বলেন, বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে সড়কে সমস্যার কারণে সবজিবাহী বেশকিছু গাড়ি গেল চার-পাঁচদিন সড়কে আটকে আছে। রবিবার কিছু ট্রাক নগরে প্রবেশ করলেও দেখা যায় কাঁচা মরিচসহ অধিকাংশ সবজিই পচে গেছে। তাই এখনও সরবরাহ ও দরদামে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। তবে বেশ কিছু গাড়ি কাছাকাছি আসছে, আশা করছি কাল থেকে সরবরাহ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশকিছু খামার। এসব খামারে পানিতে ডুবে মারা গেছে কয়েক হাজার মুরগি। তাতেই নগরীর বাজারে ডিমের সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি রিটন প্রসাদ চৌধুরী বলেন, বন্যায় শুধু চট্টগ্রামেই ৪০ হাজারের বেশি মুরগি মারা গেছে। শত শত খামার ক্ষতিগ্রস্ত। খামার ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই ডিম আসার কথা না। তাই সংকট তৈরি হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d