নবীজি (সা.) তাওবার নামাজ প্রসঙ্গে যা বলেছেন
প্রত্যেক মানুষ গুনাহপ্রবণ। এটা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে তারাই উত্তম, যারা গুনাহ হয়ে গেলে মহান আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে নেয়। হাদিস শরিফে মহানবী (সা.) এমন মানুষদের উত্তম মানুষ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষ মাত্রই গুনাহগার (অপরাধী)। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাকারীরাই উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৯)
তাই গুনাহ হয়ে গেলে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে তাওবা করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। মানুষ যখন তার ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়, নিজেকে সুধরে নেওয়ার প্রত্যয়ে মহান আল্লাহর দরবারে খাঁটি মনে তাওবা করে, তখন মহান আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা তাওবা করেছে এবং নিজেদের সংশোধন করেছে এবং সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছে। অতএব, এদের তাওবা আমি কবুল করব। আর আমি অধিক তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬০)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর সীমা লঙ্ঘন করার পর কেউ তাওবা করলে এবং নিজেকে সংশোধন করলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৯)
এখন প্রশ্ন হলো, সঠিকভাবে তাওবা করব কিভাবে? এর উত্তম পদ্ধতি হাদিসের মধ্যেই আছে। আসমা ইবনুল হাকাম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলী (রা.)-কে বলতে শুনেছি, … তিনি বলেন, আবু বকর (রা.) আমাকে একটি হাদিস বর্ণনা করলেন, মূলত তিনি সত্যই বলেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যখন কোনো বান্দা কোনো রূপ গুনাহ করার পর উত্তমরূপে অজু করে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর কাছে গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২১)
এই নামাজের অজু ও নামাজের মাঝখানে কোনো দুনিয়াবি কাজ বা কথা না বলা উত্তম। কারণ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার মতো এ রকম অজু করবে, অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে, এবং এর মাঝে দুনিয়ার কোনো খেয়াল করবে না, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ১৫৯)
নামাজ শেষে আল্লাহর তাসবিহ পড়বে, আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং ইস্তিগফার পড়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।
তাওবার দোয়া: তাওবার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো সাইয়েদুল ইস্তিগফার। নিম্নে তার উচ্চারণসহ অর্থ তুলে ধরা হলো—
‘আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খলাকতানি, ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা, ওয়া ওয়া‘দিক মাসতাতা‘তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সনা‘তু, আবু-উ বিনি‘মাতিকা ওয়া আবু-উ বিজাম্বি ফাগফিরলি ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা। ’
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনারই বান্দা। আমি যথাসাধ্য আপনার সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকব। আমি আমার নিকৃষ্ট আমল থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই, আপনার যে অসংখ্য নিয়ামত ভোগ করছি এ জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। আমি আমার কৃত অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। বস্তুত আপনি ছাড়া অপরাধ ক্ষমা করার কেউ নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭০)
উল্লেখ্য, কারো এই দোয়া মুখস্থ করা সম্ভব না হলে সে নিজের ভাষায়ও মহান আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে তাওবা করতে পারবে। ইনশাআল্লাহ মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।