নামাজে ভুল হলে করণীয় ও সাহু সিজদা
নামাজ মুমিনদের ওপর আবশ্যকীয় ইসলামের মৌলিক একটি বিধান। অনেক সময় বিভিন্ন চিন্তার কারণে নামাজে রাকাত সংখ্যা ভুলে যান অনেকে।
নামাজ তিন রাকাত হলো না চার রাকাত- এমন সন্দেহ নিয়ে নামাজ শেষ করে আবার নতুন করেও নামাজ আদায় করে থাকেন অনেকে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? এর কয়েকটি ধরন হতে পারে।
১. দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাজে দুই নাকি তিন রাকাত মনে হলে দুই রাকাত ধরে নিতে হবে। আর এ সংশয়ের কারণে সাহু সিজদা দিতে হবে।
২. চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে তিন নাকি চার মনে হলে, তিন রাকাত হিসাব করতে হবে। শেষে সাহু সিজদা করতে হবে।
৩. নামাজে প্রবল সন্দেহ হলে যেই রাকাতের প্রতি প্রবল ধারণা হবে সেটি আমলে নিতে হবে।
৪. কোনটিই প্রবল মনে না হলে, যেটি কম রাকাত সেটি ধর্তব্য হবে। তবে শেষে সাহু সিজদা দিতে হবে।
৫. নামাজ শেষে রাকাত নিয়ে সন্দেহ হলে পুনরায় আদায় করতে হবে।
যে ব্যক্তির প্রায় সময়ই সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে যেদিকে তার মন বেশি যায়, সেটার ওপর আমল করবে।
যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তবে কমটির ওপর আমল করবে এবং প্রতি রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করতে হবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৮৮)
এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে- হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কারও যদি নামাজের মধ্যে সন্দেহ হয়, ফলে সে জানে না যে এক রাকাত পড়ল নাকি দুই রাকাত। তাহলে সে যেন এক রাকাত ধরে নিয়ে নামাজ পড়ে।
আর যদি দুই রাকাত পড়ল না তিন রাকাত, তা না জানে তাহলে যেন দুই রাকাত ধরে নামাজ পড়ে এবং (এসব ক্ষেত্রে) সালাম ফেরানোর পূর্বে দুটি সিজদা আদায় করে (অর্থাৎ সাহু সিজদা করে)।
সাহু সিজদাযেভাবে দেবে
‘সিজদায়ে সাহু’ মানে ভুলের সিজদা। নামাজে কোনো ওয়াজিব ভুলক্রমে ছেড়ে দিলে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়। তখন সিজদায়ে সাহু দেওয়া ওয়াজিব। সিজদায়ে সাহুর মাধ্যমে নামাজে পূর্ণতা আনা হয়।
সাহু সিজদা যার ওপর ওয়াজিব হয়েছে, সে শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে ডান দিকে এক সালাম ফেরাবে। এরপর তাকবির বলে নামাজের মতো দুইটি সিজদা করে বসে যাবে এবং তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফেরাবে। সালামের আগে সিজদা করলে নামাজ হয়ে যাবে। তবে তা মাকরুহে তানজিহি। (মুসনাদে আহমদ: ১৮১৮৮, বুখারি, হাদিস: ১১৫০, ১১৫৩, তিরমিজি, হাদিস: ৩৬১)
সিজদায়ে সাহু কখন, কেন ও কীভাবে দেবে—এর সংক্ষিপ্ত নিয়মাবলী-
♦ নামাজের কোনো ওয়াজিব কাজ কেউ ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলে গুনাহগার হবে। নামাজও নষ্ট হয়ে যাবে। পুনরায় আদায় করতে হবে। সিজদায়ে সাহু দ্বারা তখন নামাজ পূর্ণ হবে না।
♦ নামাজের কোনো ওয়াজিব কাজ ভুলক্রমে ছুটে গেলে, সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস: ৩৮৬, আবু দাউদ, হাদিস: ৮৭৪, আল-মুজামুল আওসাত: ৭৮০৮)
♦ ফরজের প্রথম দুই রাকাত বা যেকোনো এক রাকাতে সুরায়ে ফাতিহা পড়তে গেলে অথবা সেরূপ নফল ও বিতরের যেকোনো রাকাতে ভুলক্রমে সুরায়ে ফাতিহা পড়া না হলে, সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৩)
♦ ফরজের প্রথম দুই রাকাতে কেরাত পড়া ভুলে গেলে, শেষ দুই রাকাতে তা পড়ে নেবে। তবে সিজদায়ে সাহু দেবে। (মুসলিম: ৮৯৫, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ১/৪০৯)
♦ ফরজের দুই রাকাত বা এক রাকাতে কিরাত মেলাতে ভুলে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে। (নাসায়ি: ১২৪৩)
♦ কেউ যদি এক সিজদা করে পরের রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যায়, তখন ওই রাকাত দুই সিজদা দিয়ে সম্পন্ন করে ছুটে যাওয়া সিজদাও এর সঙ্গে মিলিয়ে নেবে। শেষে সিজদায়ে সাহু করবে, এতে করে নামাজ হয়ে যাবে। (প্রাগুক্ত)
♦ যদি তিন বা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে প্রথম বৈঠক ভুলে যায়, তা ফরজ নামাজ হোক বা নফল নামাজ, সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস: ৮৮২)
♦ তাশাহহুদ পড়তে ভুলে গেলে, সাহু সিজদা দিতে হবে। (নাসায়ি, হাদিস: ১২৪৩)
♦ বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে রুকুর আগে কুনুত পড়তে ভুলে গেলে সাহু সিজদা দিতে হবে। (বায়হাকি, হাদিস: ৪০৪২,)
♦ প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের সঙ্গে দরুদ ইত্যাদি পড়ে ফেলে, তাহলে সাহু সিজদা দিতে হবে। (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৫)