চট্টগ্রাম

নিজ বাসভবনে আটকে ছিলেন মেয়র

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারি বর্ষণে ও জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত এই বৃষ্টিপাত হয়। এতে মূল সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতেও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও গলা সমান পালিতে তলিয়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও লোকজন প্রধান সড়কে জাল নিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে।

আবাসিক এলাকায় নৌকা নিয়ে পারাপার করতে দেখা গেছে মানুষজনকে। অতিবর্ষণে বহদ্দারহাট এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিমের বাস ভবনও পানিতে তলিয়ে যায়। সকাল থেকে তিনিও বের হতে পারেননি।

নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকা, হালিশহর আবাসিক এলাকা, বাকলিয়ার বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার বহু বাসা-বাড়ির নিচতলা পানিতে তলিয়ে যায়। ঘর থেকে বের হতে পারেননি বাসিন্দারা। এ কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হয় নগরীর লাখ লাখ মানুষ। কোথাও কোথাও পানি ভেঙে রিকশা ও হালকা যানবাহন চলাচল করলেও কোনো কোনো সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া দপ্তর জানায়, সোমবার সকাল ৯টায় পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২০৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে ভারিবর্ষণে নির্মাণাধীন ভবনের সীমানা দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৮) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দুই পথচারী সামান্য আহত হয়েছেন। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার টেক্সটাইল গেট আবাসিক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

সাইফুল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বাবুল মিয়ার ছেলে।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা জানান, রাস্তার পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের সীমানা দেয়াল ধসে সাইফুলের মৃত্যু হয়েছে। বর্ষণ ও পানির স্রোতের কারণে দেয়ালের গোড়া নরম হয়ে ভেঙে পড়ে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার সকাল থেকেই চট্টগ্রামে বর্ষণ শুরু হয়। দুপুরে থামলেও বিকাল থেকে আবার শুরু হয়। রোববার রাতভর এবং সোমবার সকালেও থেমে থেমে বর্ষণ অব্যাহত থাকে। টানা ভারি বর্ষণ চট্টগ্রাম নগরীর নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। নগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

জেলার পাঁচ উপকূলীয় উপজেলা বিশেষ করে সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী উপজেলার মানুষ জলোচ্ছ্বাস আতঙ্কে রাত পার করেছেন। আনোয়ারা ও বাঁশখালীর মানুষ বেড়িবাঁধের ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন। উত্তাল সাগরের জোয়ার ও ঢেউয়ের কারণে এমন আতঙ্ক ছিল তাদের মধ্যে। তবে রেমাল উপকূল অতিক্রম করায় শেষ বিকালে স্বস্তি ফিরে আসে বাসিন্দাদের মধ্যে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখ লাখ মানুষ কয়েক ঘণ্টা ছিল বিদ্যুৎবিহীন।

বৃষ্টিতে নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ ও শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, ছোটপোল, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, কেবি আমান আলী রোড, চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া, ফরিদারপাড়া, পাঠাইন্যাগোদা, মুন্সীপুকুরপাড়, তিন পুলের মাথা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, মুরাদপুরের বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও অলিগলি পানিবন্দি হয়ে পড়ে। দুদিনের টানা বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

এদিকে ড্রেনের পানি সড়কে উঠে আসে। নোংরা পানি নিচু এলাকার বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে। পানি ওঠায় নিচু এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। আগ্রাবাদের কিছু এলাকা সকাল থেকে বুক সমান পানিতে তলিয়ে যায়। রান্না-বান্না ও শৌচকর্মে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের।

চকবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে কাঁচাবাজারের দোকানপাট পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভোগ্যপণ্যের দোকান-আড়তেও পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায় দেখা গেছে, গলা সমান পানিতে বোট ভাসিয়ে লোকজন যাতায়াত করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নগরী তলিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d