চট্টগ্রাম

নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা

উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। টানা ৬ ঘণ্টা ধরে বিপৎসীমার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল।

শনিবার (৬ জুন) দুপুর ১২টায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০৫ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা সকাল ৯টা থেকে অব্যাহত রয়েছে।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র ও চরবাসী জানান, ভারতের সিকিমে উৎপত্তিস্থল থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। নদীর বাংলাদেশ অংশের উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা পানি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ফারাক্কা গেট খুলে বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হয়। একইভাবে শুস্ক মৌসুমে গেট বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভূমি করে তিস্তার পানি একক ব্যবহার করছে ভারত সরকার।

বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় উজানে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ভারত তাদের অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশ অংশে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ উজানের ঢলে তিস্তার পানি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত। ফলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দিকে এগিয়ে আসছে।

তাই বর্ষাকাল শুরু হলেই বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা নদীর তীরবর্তি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের সড়ক পথ। চরবাসীর যাতায়তের মাধ্যম হয়েছে নৌকা।

টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢেউয়ের কারণে বন্যার শঙ্কা করছেন তিস্তা পাড়ের মানুষ। বন্যার সময় পানিবন্দি জীবন কাটিয়ের উঠার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চরবাসী ও নদী তীরবর্তী পরিবারগুলো। নদী পাড়ের মৎস চাষিরা তাদের পুকুরের মাছ রক্ষায় নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছেন। বন্যা হলে ভেসে যেতে পারে লাখ লাখ টাকার মাছ। গবাদি পশু পাখি নিয়েও বিপাকে নদী পাড়ের মানুষ। তাই বন্যার শঙ্কায় নির্ঘূম রাত কাটছে নদীর পাড়ের মানুষের।

গোবর্দ্ধন চরাঞ্চলের কৃষক হামিজার রহমান বলেন, বৃষ্টির পানি সঙ্গে উজান থেকে আসছে পানি। বন্যা হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। কিছু কিছু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। গবাদি পশু পাখি আর শিশু বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে বর্ষাকালে বেশ কষ্ট হয়।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড তিস্তা নদীর তীরে। বন্যা হলেই ৬টি ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানি বাড়ায় এরই মধ্যে নিম্নাঞ্চলের কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

তিস্তা ব্যারাজ বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ৬টায় ছিল ১৮ সেন্টিমিটারের নিচে, ৯টায় ছিল ১০ সেন্টিমিটারের নিচে এবং দুপুর ১২ টায়ও অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা ৬ ঘণ্টা ধরে ১০ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২০ মিলিমিটার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, সকাল ৯টা থেকে তিস্তা নদীর এ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, নদ-নদীর পানি খবর সার্বক্ষণিক নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাধ্যমে নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d