নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি, বলছে ইসি
নির্বাচন কমিশন (ইসি) মনে করে, বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থানে এখনো অনড়। রাজপথে মিছিল ও জনসমাবেশের মাধ্যমে তারা নিজেদের পক্ষে সমর্থন জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু তাতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকট নিরসন হচ্ছে না। এ ছাড়া অবাধ নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটি এখনো তৈরি হয়নি।
গণমাধ্যম সম্পাদকদের কাছে পাঠানো এক ধারণাপত্রে ইসি এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আগামী ২৬ অক্টোবর যে কর্মশালা হবে, তার আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে এ ধারণাপত্র পাঠানো হয়েছে। ইসি এর শিরোনাম দিয়েছে- ‘আলোচনার জন্য ধারণাপত্র’।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, কর্মশালা হবে নির্বাচন ভবনে। এতে ৩৮ জন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ধারণাপত্রে বলা হয়েছে- ‘নির্বাচন কমিশন এককভাবে নির্বাচন সম্পর্কিত সব দায়িত্ব পালন করে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তা অনিবার্যভাবে আবশ্যক হয়ে থাকে। সংবিধান ও আইনে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সরকারও সে বিষয়ে অবহিত। তাই সক্ষমতার অবস্থান থেকে সরকার নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি বারবার ব্যক্ত করছে। কমিশনও নিজস্ব সক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতার
মধ্যেও আয়ত্তে থাকা সর্বোচ্চ সামর্থ্য যথাসম্ভব প্রয়োগ করে সরকারের সহায়তা গ্রহণ করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ, পক্ষপাতহীন ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে যাচ্ছে। এর পরও বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা ব্যক্ত করা হচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক হয়ে থাকে সবার সমন্বিত সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
ধারণাপত্রে আরও বলা হয়, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে সরকার ও কমিশনের বিষয়ে কতিপয় রাজনৈতিক দলের গণমাধ্যমে প্রচারিত অনাস্থা কাটিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়াস আমরা (নির্বাচন কমিশন) অব্যাহত রেখেছি। তবে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটি এখনো হয়ে ওঠেনি। প্রত্যাশিত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতভেদের নিরসন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দলগুলো স্ব স্ব সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়।’
ধারণাপত্রে বলা হয়, ‘রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শন করে স্ব স্ব পক্ষে সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকটের নিরসন হচ্ছে বলে কমিশন মনে করে না। বিষয়টি রাজনৈতিক। নির্বাচন কমিশনের এ ক্ষেত্রে করণীয় কিছু নেই।’
ধারণাপত্রে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন বিষয়ে দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। তবে আইন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমান্তরাল মিথস্ক্রিয়া না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আইনের বাস্তবায়ন সহজসাধ্য হয় না। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ, মতানৈক্য ও সংকট হতেই পারে। পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অন্বেষণ করা হলে তা অধিকতর ফলদায়ক হতে পারে। পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য নিয়ামক। কমিশন গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করে না। নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। তবে নির্বাচনই হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন। নির্বাচন আয়োজনে যদি সংকট নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে, তা হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।’