নেইমারকে ছাড়া ধুঁকছে ব্রাজিল
কোয়ার্টার-ফাইনালে উরুগুয়েরে বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে আরও একটি টুর্নামেন্ট একরাশ হতাশা নিয়ে শেষ করেছে ব্রাজিল। অনেক নতুন ও তরুণের উপস্থিতিতেও কোনো আশার আলো দেখাতে পারেনি পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। আক্রমণভাগের বিবর্ণতায় আরও স্পষ্ট হলো নেইমারের অভাব।
কোপা আমেরিকা শুরুর আগে বিজ্ঞাপনের জন্য রোনালদিনিয়োর বলা কথাগুলোই যেন এই ব্রাজিলের জন্য সত্যির খুব কাছাকাছি। বিশ্বকাপ জয়ী বলেছিলেন, দলে নিবেদন ও দৃঢ়তার অভাব রয়েছে।
“সবকিছুই অনুপস্থিত, তাড়না, উচ্ছ্বাস… তাদের ভালো খেলতে হবে। তাই আমি তাদের কোনো ম্যাচই দেখব না। আমি ব্রাজিলের খেলা বর্জন করব।”
না মন ভরানোর মতো খেলতে পেরেছেন রাফিনিয়া, রদ্রিগো, ভিনিসিউস জুনিয়ররা। না মাঠে পেয়েছেন সাফল্য। না দিতে পেরেছেন ভবিষ্যতের জন্য কোনো ইঙ্গিত।
টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার পর কোচ দরিভাল জুনিয়র, এন্দ্রিকসহ যারাই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন, সবাই বলেছেন বাছাই উতরে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া তাদের মূল লক্ষ্য।
ব্রাজিলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বলছে, এই লক্ষ্য পূরণে নেইমারের উপস্থিতি খুব জরুরি। হাঁটুর চোটে গত বছরের অক্টোবর থেকে মাঠের বাইরে আছেন এই তারকা ফরোয়ার্ড। এই সময়ে প্রীতি ম্যাচ বাদে খেলা ৬ ম্যাচে কেবল ছয় গোল দিতে পেরেছে দলটি। এর চারটিই এক ম্যাচে, কোপা আমেরিকায় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। জয়ও পেয়েছে কেবল ওই ম্যাচেই। তিন ম্যাচে কোনো গোলই করতে পারেনি তারা।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সবশেষ তিন রাউন্ডেই হেরেছে ব্রাজিল। শুরুটা গত অক্টোবরে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে হার দিয়ে, সেটাই আপাতত নেইমারের সবশেষ ম্যাচ হয়ে আছে। পরের মাসে কলম্বিয়ার মাঠে হারে ২-১ গোলে।
ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ঘরের মাঠে হারে ১-০ গোলে। থামে ৬৪ বছরের অবিশ্বাস্য এক অজেয় যাত্রা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ঘরের মাঠে সেটাই ছিল ব্রাজিলের প্রথম পরাজয়।
আবার যখন ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের লড়াইয়ে নামবে ব্রাজিল তখন তাদের সঙ্গী হবে টানা চার ম্যাচে জয়শূন্য থাকার তেতো স্মৃতি। ২০০১ সালের পর প্রথমবার বাছাইয়ে টানা তিন ম্যাচ হারা দলটি ৭ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় আছে ষষ্ঠ স্থানে। কোপা আমেরিকা থেকে ওই অবস্থান পরিবর্তনের জন্য আশা জাগানিয়া কোনো ইঙ্গিত দিতে পারেনি ব্রাজিল। কোস্টা রিকার বিপক্ষে গোল শূন্য ড্রয়ে আসার শুরুর পর প্যারাগুয়ের বিপক্ষে পায় বড় জয়।
কলম্বিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর উরুগুয়ের বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়। চার ম্যাচে কেবল একটি জয় ব্রাজিলের সঙ্গে মোটেও মানানসই নয়। তাই নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা নেইমারের ত্রাতা হয়ে ফেরার অপেক্ষায় তারা।
ব্রাজিলের হয়ে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১২৮ ম্যাচ খেলেছেন নেইমার। ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেকের পর দলটির হয়ে গোল করেছেন তিনি ৭৯টি। নিজের চোট, দলের বিবর্ণ পারফরম্যান্স সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনেই হয়তো দাঁড়িয়ে নেইমার।