চট্টগ্রামপটিয়া

পটিয়া উপজেলা নির্বাচন : সম্পদশালী দুই প্রার্থী হতে চান চেয়ারম্যান

২৯ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে পটিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে অংশ নিচ্ছেন দুই প্রার্থী দিদারুল আলম ও হারুনুর রশিদ।

রাজনীতির মাঠে দুইজনের আলাদা পরিচয় থাকলেও ব্যবসায়ী মহলেও পরিচিত মুখ এ দুই প্রার্থী।
দিদারের ঠিকাদারী, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার বিপরীতে হারুণের রয়েছে লবণ পরিশোধনাগার।

দুজনেরই কয়েক কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পাশাপাশি বছরে ব্যবসা থেকে আয় করেন কোটি টাকা। নিজেদের পাশাপাশি স্ত্রীরাও মালিক হয়েছেন লাখ লাখ টাকার।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা যায়, মেসার্স রয়েল অ্যাসোসিয়েটস নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক দিদারুল আলম শুধু ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় করেন ৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকা। স্ত্রীর বাৎসরিক আয় ৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকা। দুই ছেলে পড়ালেখায় যুক্ত থাকলেও ছেলেদের আয় হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে অন্যান্য আয় বাবদ দেখানো হয়েছে আরও ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

বাৎসরিক আয় ছাড়াও পাহাড়সম সম্পদের মালিক দিদার। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা এ প্রার্থীর হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৩৬ লাখ ৭২ হাজার এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার। নিজের নামে ব্যাংকে কোটি টাকার বিপরীতে স্ত্রীর নামে আছে ২০ লাখ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে ব্যাংকে আছে আরও সাড়ে ৬ লাখ টাকা। আছে পুত্রের নামে প্রাইজবন্ড বাবদ ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা।

সাড়ে ৭৩ লাখ টাকা দামের জীপ গাড়িতে চড়েন দিদার, পাশাপাশি স্ত্রীর চড়েন ৩৫ লাখ টাকার প্রাইভেট কারে। নিজের নামে ১০ ভরি এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে আরও ২০ ভরি স্বর্ণ। পটিয়ায় ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা দামের কৃষি জমি, চট্টগ্রাম শহরে ১৫৪৭ বর্গফুটের গ্যারেজ, যার মূল্য ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ও নগরের পশ্চিম ষোলশহরে ২৪ লাখ ৭৩ হাজার সমমূল্যের জায়গা রয়েছে প্রথমবারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করা এ প্রার্থীর। আছে কল্পলোক আবাসিকে ২.৬৯ কাঠা জায়গা। যার মূল্য প্রায় ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার। ঢাকার মাতিঝিলে ১৩২০ বর্গফুটের ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকার ফ্ল্যাট এবং পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ১০ হাজার বর্গফুটের ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার জমি রয়েছে তার।

এত সম্পদের বিপরীতে নিজের নামে ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছেন ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে আরও ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকার ঋণ রয়েছে দিদারুল আলমের।

অন্যদিকে হারুনুর রশিদ ৪টি লবণ পরিশোধনাগারের মালিক। বাৎসরিক আয় প্রায় ২ কোটি ৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে আসে ২ কোটি ৬ লাখ ৬১ হাজার টাকা, দোকান ও বাসা ভাড়া বাবদ পান ১ লাখ ৬২ হাজার এবং কৃষি খাত থেকে বাৎসরিক আয় ৪০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামেও আয় দেখিয়েছেন তিনি। স্ত্রী আয় করেন বছরে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও কম নয় হারুনের। বর্তমানে ১২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা নগদ আছে তার হাতে। বিপরীতে স্ত্রীর কাছে আছে আরও ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। নিজের নামে ব্যাংকে রয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে একই খাতে বিনোয়োগ আছে আরও ১০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। নিজের নামে আছে ১৫ লাখ টাকার গাড়ি। নিজের নামে মাত্র ২ ভরি স্বর্ণ দেখানো হলেও স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪০ ভরি স্বর্ণ।

তাছাড়া নিজের নামে ৬২ শতক কৃষিজমি রয়েছে তার। যার আনুমানিক মূল্য দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ১০৬ শতক অকৃষিজ জমির মূল্য বাবদ দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আছে ১টি ফ্যাক্টরি যার মূল্য ১০ লাখ, ২৩৬০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৫৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এছাড়া অংশীদারি ব্যবসায় প্রায় ২২ লাখ টাকার সম্পত্তিও রয়েছে তার। আছে ৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ।

ব্যবসার পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলান হারুনুর রশিদ।

নির্বাচনী প্রচারণায় এক অপরের বিপক্ষে বিভিন্ন অভিযোগ তুললেও ভোটের মাঠে নিজেদের শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে দাবি করেছেন উভয় প্রার্থী। ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি বজায় থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচনে ফল নিজেদের পক্ষে থাকবে- মত তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d