পড়ালেখার পাশাপাশি উদ্যোক্তাও
কাঠের ফ্রেমে বাঁধা সবুজ রঙের একটি শাড়ির আঁচল। সেই আঁচলে লাল, হলুদ, সাদা রঙ দিয়ে আঁকছেন নানা রঙ্গের চিত্র। কিছুক্ষণের মধ্যেই আঁচলজুড়ে ফুটে উঠে দৃষ্টিনন্দন ফুল। এভাবে মাসে তিন থেকে চারটি শাড়ি, একাধিক হিজাব, থ্রি-পিস, গাউন, বাচ্চাদের পোশাকে হ্যান্ড পেইন্টের কাজ করেন শিক্ষার্থী খোরশেদ ফারহানা রিতু। পড়াশোনা আর ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা দুটোই সামলাচ্ছেন দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর সল্টগোলা এলাকার মেয়ে খোরশেদ ফারহানা রিতু। নিজে উপার্জনের পাশাপাশি অন্যের উপার্জনেও ভূমিকা রাখছেন এ শিক্ষার্থী। কলেজ পড়ুয়া এ শিক্ষার্থী লেখাপড়ার পাশাপাশি এখন ছোটখাটো উদ্যোক্তা।
আলাপকালে রিতু বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনের গল্প যদিও ছোট কিন্তু ইচ্ছে শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস ছিলো প্রখর। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছে শক্তিরবলে এ যাত্রা শুরু করি। যখন ফেসবুক জগতে এসেছি তখন থেকেই অনেক আপুদের দেখতাম বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বিজনেস করছেন। তখন আমি ভাবি আমিও কিছু করতে পারি। কিন্তু কি নিয়ে করবো সেটিই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে একটি যুব উন্নয়নে ট্রেনিং সেন্টার থেকে হ্যান্ড পেইন্টের উপর কাজ শিখি। সেখান থেকেই মূলত হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রথম প্রথম অর্ডার পেতাম না। তবে আত্মীয়-স্বজনের কিছু শাড়ি ফ্রি ফ্রি করে দিই। সেগুলোই অনলাইনে পোস্ট করি। এভাবে ধীরে ধীরে একজন, দু’জন করে কাস্টমার পাই। এরমধ্যে হ্যান্ডে পেইন্টের কাজ করা শাড়ি, থ্রি-পিসসহ বিছানার চাদর, ঘরের পর্দাসহ বিভিন্ন রকম পোশাকআশাকের চাহিদা বাড়ে। অনলাইনে আমার কাজের বিজ্ঞাপন দিতে থাকি। একটা পর্যায় বিভিন্ন রকম আইটেমের উপর দিনে তিনটার বেশি অর্ডার পড়তে শুরু করে। আমার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এবার দেখা যায় আমি একা কাজ করে শেষ করতে পারছি না। তাই অনলাইনের মাধ্যমেই আমাদের যে গ্রুপগুলো আছে সেখান থেকে আরো কিছু আপুর সাথে যোগাযোগ করি। আমি অর্ডার নিয়ে তাদেরসহ নিজে কাজ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ, একটা সময় আয় বাড়ে। কোনো মাসে ৩০ হাজারের উপরেও আয় হয়েছে। তবে মাসে গড়ে ২০ হাজার টাকা আয় হয় আমার।
তিনি বলেন, আমি পতেঙ্গা সিটি কপোরেশন মহিলা ডিগ্রি কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে পড়ালেখার পাশাপাশি অনলাইনকে অবলম্বন করে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে উঠি। এখন নিজে যে কিছু করতে পারছি এটাই একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার জন্য বড় বিষয়। মেয়ে হয়েও বাবা মায়ের কাছে হাত পাততে হয় না আমাকে। বরং পরিবারের কিছু দায়িত্ব আমি নিতে পারি, এটা আমার খুব ভালো লাগে। আমার একটা ভাই আছে। তাকেও সময়ে-অসময়ে আমি সহযোগিতা করতে পারি এটা আমার ভালো লাগে।
এসময় শিক্ষার্থী রিতু বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যেরও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। ভবিষ্যতে নিজেকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। আমার নিজের একটি প্রতিষ্ঠান হবে এবং সেখানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বেকারত্ব দূর করার জন্য এই অবদানটুকু রাখতে চাই।