পণ্য পরিবহন ভাড়া বেড়েছে
বৈশ্বিক মন্দা ও রপ্তানি পণ্যের কার্যাদেশ কমে যাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর ঈদ-উল-ফিতরে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের চাপ অনেকটাই কমেছে। তাই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে, সেসব গাড়ি রপ্তানি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে ফেরত আসতে সময় লাগছে।
এমনি রপ্তানি পণ্যের চাপ না থাকায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যানগুলোকে দু-তিনদিন অপেক্ষাও করতে হচ্ছে। ফলে খরচ পুষিয়ে নিতে গাড়ি মালিকরা এবার চট্টগ্রাম থেকে আমদানি পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন।
এদিকে, ঈদের আগে ও পরে মোট ছয়দিন মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। সেই সঙ্গে ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কার্যক্রম অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও ব্যাংক, কাস্টমস হাউসসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। তাই ঝুঁকি এড়াতে ঈদের ছুটির আগেই রপ্তানি পণ্য জাহাজে তুলতে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে পাঠিয়ে দেন তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানিকারকরা। এ সুযোগে প্রতিবছর ভাড়া বাড়িয়ে দেন ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিকরা। তবে এবার রপ্তানি পণ্যের চাপ কম হওয়ায় চিত্র হয়েছে ভিন্ন।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, মার্চ-এপ্রিলের এই সময়টা তৈরি পোশাক খাতের জন্য অফ সিজন। এছাড়া বৈশ্বিক মন্দার একটি প্রভাব অনেকদিন ধরেই চলছে। ফলে এবার ঈদের সময় অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় রপ্তানি পণ্যের তেমন কোন চাপ নেই।
এমন উল্টো চিত্রে এবার রপ্তানি নয়, আমদানি পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়িয়েছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিকেরা। ব্যবসায়ীরা জানান, কিছুদিন আগেও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের ভাড়া ছিল ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এখন ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহম্মদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে ঢাকার গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যেসব ট্রাক-কাভার্ডভ্যান গেছে তারা ঢাকায় দু-তিনদিন অলস বসে রয়েছে। রপ্তানি পণ্যের চাপ না থাকায় ভাড়া পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে। তাই এবার ঈদের ছুটিতে পণ্য পরিবহনের চাপ অন্যান্য বছরের তুলনায় খুবই কম হবে। তাই চট্টগ্রাম থেকে যা ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই খরচ সামলাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিকদের দাবি, যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে না পারায় রপ্তানি পণ্য নিয়ে আসা অনেক গাড়ি ডিপোতে আটকা পড়েছে। সেই সঙ্গে আন্তঃজেলার অনেক গাড়ি পণ্য ডেলিভারি দিয়ে আর না ফেরায় চট্টগ্রামে আমদানি পণ্য পরিবহনে গাড়ি সংকটের কারণে ভাড়া বাড়ে।
এবার রপ্তানি পণ্যের চাপ কম হওয়ায় বেসরকারি ডিপোগুলোর চিত্রও ভিন্ন। কয়েকটি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে দেখা যায়, ডিপোর সামনে পণ্য বোঝাই গাড়ির কিছুটা জট থাকলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় কম।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোটস এসোসিয়েশনের মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আমরা চাপ ততটা অনুভব করছি না। আসলে চাপ বাড়ার একটা সময় আছে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, জুন-জুলাই মাসে রপ্তানি পণ্যে চাপ বেড়ে যায়। গত কয়েক বছর যেহেতু ওই সময়ে ঈদ পড়তো, তাই চাপটাও বাড়তো। এবার তেমন চাপ নেই।