পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই বলিউড তারকার যত প্রেম
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন মডেল ও বলিউডের অভিনেত্রী নার্গিস ফাখরি। ২০১১ সালে ‘রকস্টার’ ছবির মাধ্যমে নার্গিসের বলিউডে অভিষেক। ‘ম্যায় তেরা হিরো’, ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’, ‘হাউসফুল থ্রি’ ইত্যাদি সিনেমা তাঁকে পরিচিতি এনে দেয়। ‘রকস্টার’ ছবির সহ-অভিনেতা রণবীর কাপুরের সঙ্গে নার্গিসের প্রেমের খবর চাউর হয়। পরবর্তী সময়ে উদয় চোপড়া, রানা দাগুবতির সঙ্গেও তাঁর প্রেমের খবর ডালপালা মেলে। একসময় ‘ম্যায় তেরা হিরো’ ছবির সহ-অভিনেতা বরুণ ধাওয়ানের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছেন নার্গিস ফাখরি। আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। জন্মদিনে জেনে নিই এই অভিনেত্রীর প্রেমের খবর।
‘রকস্টার’ ছবির শুটিং চলার সময় রণবীর কাপুর ও নার্গিস ফাখরির প্রেমের জোর গুঞ্জন ওঠে। প্রচুর সময় একসঙ্গে কাটাতে দেখা যায় তাঁদের। সে সময় নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে ছবি মুক্তির আগপর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছিলেন তাঁরা। অবশেষে ছবি মুক্তির পর তাঁরা জানান, তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক নেই। প্রেমিকা ক্যাটরিনা কাইফের সঙ্গে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন রণবীর। আর নার্গিস নিজেকে সঁপে দেন অভিনেতা ও প্রযোজক উদয় চোপড়ার বাহুডোরে। পিটিআইসহ বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হয়।
দীর্ঘদিন নার্গিসের সঙ্গে উদয় চোপড়ার প্রেমের খবরে শোরগোল উঠেছিল বলিউডে। উদয় ইশারা-ইঙ্গিতে প্রেমের কথা স্বীকার করলেও মুখ খোলেননি নার্গিস। তবে বরাবরই তাঁদের কর্মকাণ্ডে বিশেষ সম্পর্কের আঁচ পাওয়া গেছে। লুকোচুরি না খেলে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে হাজির হয়ে পরোক্ষভাবে নিজেদের প্রেমের সম্পর্কের জানান দেন তাঁরা।
২০১৩ সালে মালদ্বীপে অবকাশযাপনের সময় ক্যামেরাবন্দী হন এ প্রেমিক যুগল। পরের বছরের ৪ এপ্রিল মুক্তি পায় নার্গিস অভিনীত ছবি ‘ম্যায় তেরা হিরো’। ছবিটির বিশেষ একটি প্রদর্শনীতে নার্গিসের সঙ্গে দেখা যায় উদয়কে। এ ছাড়া ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল ইতালিতে হুট করেই দীর্ঘদিনের প্রেমিকা রানী মুখার্জিকে বিয়ে করেন উদয়ের বড় ভাই নির্মাতা আদিত্য চোপড়া। রানী-আদিত্যর খুব কাছের কয়েকজন মানুষই কেবল সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। রানী-আদিত্যর বিয়ের কাছাকাছি সময়ে তোলা একটি সেলফি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন নার্গিস। ইতালির একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোলা ওই ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর খবর চাউর হয়, রানী-আদিত্যর বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন নার্গিস।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই নার্গিসের সঙ্গে সখ্য নিয়ে নানা মন্তব্য পোস্ট করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন উদয়। একবার এক টুইটার বার্তায় উদয় লিখেছিলেন, ‘নার্গিস, তুমি কি জানতে আমাদের সম্পর্ক অনেক আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। তোমার অনাগত সন্তানের বাবা আমার বাবার ছেলে।’ পরে অবশ্য টুইটার থেকে বার্তাটি মুছে ফেলা হয়।
শুধু তা-ই নয়, ২০১২ সালে টুইটারে নার্গিসকে নিয়ে উল্টাপাল্টা বার্তা লিখে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন উদয়। ওই বার্তায় নার্গিসের প্রতি তাঁর দুর্বলতার কথা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। শুরুতে স্বাভাবিকভাবেই নার্গিসকে নিয়ে লেখা শুরু করেন উদয়। তিনি লেখেন, ‘নার্গিস সম্পর্কে অজানা একটি তথ্য সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি। সে ভ্রমণ করতে খুবই ভালোবাসে।’
এরপর নার্গিসের ব্যক্তিগত আরও অনেক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে থাকেন উদয়। তিনি লেখেন, ‘ভ্রমণ, স্পা, ডরিটস চিপস, পিৎজা আর আমাকে ভালোবাসে নার্গিস ফাখরি। কিন্তু আমি নার্গিসকে ভালোবাসি না। আপনারা ভুলেও এ কথা তাঁকে জানিয়ে দেবেন না যেন! তাহলে সে আমাকে মেরে ফেলবে। আচ্ছা ঠিক আছে, নার্গিস আর আমি শুধুই “বন্ধু”।’ একপর্যায়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে বুঝতে পেরে উদয় লেখেন, ‘এসব কথাই ছিল “উদয় চোপড়া ম্যাডনেস আওয়ার”-এর অংশ।’ নার্গিসকে নিয়ে উল্টাপাল্টা টুইট করার পর তাঁর কাছে ক্ষমাও চান উদয়। তিনি লেখেন, ‘নার্গিস ফাখরির ক্ষমাপ্রার্থী আমি। স্রেফ মজা করার জন্যই এতক্ষণ এমন পাগলামি করেছি। এভাবে সীমা লঙ্ঘন করাটা আমার উচিত হয়নি। যা-ই হোক, আর কখনোই আমার কাছ থেকে কিছু শুনতে পারবে না তুমি। বিদায়। ভালো থেকো।’
এই জুটির বিয়ের খবর নিয়েও শোরগোল উঠেছিল বলিউডে। ২০১৩ সালের মার্চে ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, নির্মাতা যশ চোপড়ার ছেলে উদয় চোপড়ার সঙ্গে নার্গিস ফাখরির বিয়ের কথাবার্তা চলছে। নার্গিস-উদয়ের বিয়ে নিয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বিস্তারিত আলোচনাও করেছেন। কিন্তু মাত্র এক মাস পর উদয়ের সঙ্গে বিয়ের খবরকে গুজব বলে দাবি করেন নার্গিস। তিনি নিজেকে একা বলেও দাবি করেন।
অবশেষে ২০১৪ সালের জুন মাসে উদয়-নার্গিসের বিচ্ছেদের খবর প্রকাশিত হয়। এই জুটির বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, নার্গিস-উদয়কে আর প্রেমিক যুগল বলা যাবে না। তাঁদের প্রেম ভেঙে গেছে। নার্গিস বলিউডে ক্যারিয়ার গড়তেই বেশি মনোযোগী। কিন্তু উদয় তাঁর কাছ থেকে প্রেমের পরিণতি নিয়ে পাকা কথা চাচ্ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন থেকেই তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে উদয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছেন নার্গিস।
উদয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর এক বন্ধুর মাধ্যমে ‘বিগহার্ট লাভার বয়’ সালমান খানের সঙ্গে পরিচিত হন নার্গিস। পরিচয়ের পরপরই তাঁকে দারুণ পছন্দ করে ফেলেন সালমান। দ্রুত বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী এ তারকা অভিনেতার সঙ্গে বেশ ভাব জমিয়ে ফেলেন নার্গিস। তাঁদের মধ্যে চমত্কার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে ওঠে। বন্ধুত্বের খাতিরে সালমান তাঁর অভিনীত ‘কিক’ ছবিতে নার্গিসকে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করেন নির্মাতাদের। খান সাহেবকে খুশি রাখতে ছবির একটি আইটেম গানে নার্গিসের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয়।
দক্ষিণি অভিনেতা রানা দাগুবতির সঙ্গেও নার্গিসের প্রেমের খবর চাউর হয়েছিল। দক্ষিণি একটি ছবির আইটেম গানে অংশ নিতে চেন্নাই গিয়েছিলেন নার্গিস। সেখানে রানার সঙ্গে পরিচয়ের পরপরই তাঁদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। একে অন্যের সঙ্গ দারুণ উপভোগ করেন তাঁরা। অবশ্য অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই রানা-নার্গিস প্রেমের অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
২০১৪ সালের দিকে নার্গিসের প্রেমিক হিসেবে শোনা গেছে বরুণ ধাওয়ানের নাম। সে বছর এপ্রিলে মুক্তি পাওয়া ‘ম্যায় তেরা হিরো’ ছবিতে নার্গিস জুটি বেঁধে অভিনয় করেন নির্মাতা ডেভিড ধাওয়ানের ছেলে বরুণের সঙ্গে। বলিউডে জোর গুঞ্জন, উদয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বরুণের বাহুডোরে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন নার্গিস। পরে সে সম্পর্কও ভেঙে যায়।