স্বাস্থ্য

পালংশাকের উপকারিতা

শীতকাল মানেই নতুন শাক-সবজি। বাজারে গেলেই চোখে পড়বে বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি ফল-মূল। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো পালং শাক। এটি খেতে খুব মজাদার।

পালংশাকে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন, ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস থেকে শুরু করে পিগমেন্টস। তাই পালংশাককে একরকম ‘সুপার ফুড’ বলা যায়। ত্বকের সুরক্ষা বিভিন্ন ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট্স ও পিগমেন্টের উপস্থিতি ত্বককে ক্ষতিকর ইউভি রশ্মির হাত থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ত্বকের ক্যানসারের প্রতিরোধ হিসেবেও কাজ করে।

পালংশাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যা চোখের ভেতর ও বাইরের অংশে পুষ্টি জোগায়। এটি অকাল অন্ধত্ব থেকে চোখকে রক্ষা করে। এতে প্রচুর পরিমাণ আয়রনও আছে। এই শাক মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এমনকি গর্ভস্থ শিশুর মেধা বিকাশেও পালংশাকের গুরুত্ব অপরিসীম।

চলুন দেখে নেয়া যাক পালংশাক গুণাগুণ-

দৃষ্টিশক্তি – পালংশাকে আছে বিটা ক্যারোটিন, লিউটেনিন ও জ্যানথিন। ভিটামিন এ এর ডেফিসিয়েন্সি কমায় পালংশাক। চোখের শুষ্কতা দূর করতে, চোখের আলসার সারাতে দারুণ কাজ করে পালংশাক। চোখের ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে।

ব্লাড প্রেশার – ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নেয় পালংশাক। উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম ও অত্যন্ত সামান্য পরিমাণ সোডিয়াম আছে পালংশাকে। এ ছাড়া উপস্থিত ফোলেট হাইপারটেনশন কমায় ও রক্ত জালিকাকে রিল্যাক্স করে।

ক্যানসার প্রতিরোধী – পালংশাকে আছে টোকোফেরল, ফোলেট ও ক্লোরোফাইলিন ক্যানসার প্রতিরোধে ও রোগীর চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী। ব্লাডার, প্রস্টেট, লিভার ও ফুসফুসের ক্যানসারের প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় পালং শাক-এর ভূমিকা প্রমাণিত।

ত্বকের সুরক্ষা – বিভিন্ন ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট্স ও পিগমেন্টের উপস্থিতি ত্বককে ক্ষতিকর অতি বেগুণি রশ্মির হাত থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ত্বকের ক্যানসারের প্রতিরোধ হিসেবেও কাজ করে পালংশাক।

ডায়াবেটিস – পালংশাক এ থাকা আলফা লিপোয়িক অ্যাসিড নামের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ও শরীরে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়।

অ্যাজমা প্রতিরোধ – পালংশাকে এমন কিছু পুষ্টিকর পদার্থ আছে যা অ্যাজমা প্রতিরোধে সাহায্য করে। তার মধ্যে একটি হলো বিটা ক্যারোটিন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর – ফাইবার এবং প্রচুর পরিমাণে জল আছে পালংশাকে। ফলে পালংশাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে এবং ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক-কে সুস্থ রাখে।

হাড়ের গঠন – পালংশাক-এ ভালো পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে। মজবুত হাড়ের গঠনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান ভিটামিন কে। যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন কে আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকলে তা ক্যালসিয়াম সংগ্রহে সাহায্য করে ও মূত্রের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের অতিরিক্ত বেরিয়ে যাওয়া আটকায়।

পালংশাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, ও বি৬ রয়েছে। এগুলো চুল পড়া রোধ করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করে।

পালংশাকে থাকা ফ্ল্যাভনয়েড অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যা মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে। এটি মস্তিষ্কের বয়স কমানোর পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কের শক্তি অটুট রেখে অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত স্নায়ুতন্ত্রকে নির্ভুলভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। এ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘ই’। দৈনিক গড়ে ৩০ গ্রাম পালংশাক খেলে অ্যালঝাইমার্স রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

সতর্কতা – পালংশাকে প্রচুর অক্সালেট থাকে। কিডনির পাথরে অক্সালেট পাওয়া গেছে এমন কেউ বেশি পরিমাণে পালংশাক খাবেন না। এতে অক্সালিক অ্যাসিডের পরিমাণও বেশি। বেশি অক্সালিক অ্যাসিড ক্যালসিয়ামের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান শুষে নেয়। হালকা রান্না করলে এই অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যায় বলে ধারণা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d