পিডিবির চোখ শুধু চমেক-রেলওয়ের ঘরে!
চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া বিলের খাতায় নাম উঠেছে সরকারি অনেক সংস্থার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষসহ এমন অসংখ্য সংস্থার কাছে পাওনা ১২৫ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একার কাছেই ৬১ কোটি টাকা!
পিডিবির তথ্যমতে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনেরই সর্বোচ্চ বিল বাকি। তবে, বারবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ‘ঘরে’ যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। লাইন কেটে ‘অন্ধকার’ করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠান দুটিকে। সবশেষ, সোমবার (২৫ জুন) বকেয়া আদায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নে অভিযান চালায় পিডিবি। ওই দিনও প্রতিষ্ঠান দুটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল অফিসের ২ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং চমেকের ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা বকেয়া।
পিডিবি বলছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশশের বকেয়া সর্বোচ্চ হলেও সংস্থাটি বকেয়ার কিছু অংশ পরিশোধ করে ‘সময়’ নিয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলকে ৬ মাস ধরে চিঠি দিয়েও বকেয়া আদায়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সরকারি ১৭ প্রতিষ্ঠানের কাছে ১২৮ কোটি ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৪১৫ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের কাছেই বকেয়া ৬৩ কোটি ৯৫ লাখ ৭৯ হাজার ১৯০ টাকা।
সেনাবাহিনীর কাছে ২০ কোটি ১২ লাখ ২৪ হাজার ৬৯২ টাকা, পুলিশের কাছে ৮ কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজার ২১ টাকা, নৌবাহিনীর কাছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৬৪ হাজার ১৪৫, বিমানবাহিনীর কাছে এক কোটি ৭৫ লাখ ৮৯ হাজার ২৭৭ টাকা এবং কোষ্টগার্ডের কাছে এক কোটি ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৪২ টাকা পাবে পিডিবি।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ৭ কোটি ২১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯২, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪ কোটি ৮৫ লাখ ২২ হাজার ২৪, গণপূর্ত বিভাগে এক কোটি ৫০ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি, সড়ক ও জনপথ বিভাগে ৬৮ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯, জনস্বাস্থ্যে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৬৮, পৌরসভায় ৩ কোটি ৩১ লাখ ৩৫ হাজার ৬১৭, ওয়াসা ১৯ লাখ ৪১ হাজার ২৬৫, বন বিভাগে ১০ লাখ ৪ হাজার ৪০৭, শিক্ষা বিভাগে ৭০ লাখ ৩০ হাজার ১২২, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ৭০ হাজার ৩২৫ ও খাদ্য অধিদফতরে ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৭ টাকা বকেয়া আছে সংস্থাটির।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার বলছেন, ‘অন্য সংস্থার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে পিডিবি এর আগেও তাদের একটি চিঠি দিয়েছিল। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছেন। এবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে থেকে বরাদ্দ পাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেটি দেখানোর পর পিডিবি সংযোগ পুনরায় সচল করেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন তো জুন মাস। বরাদ্দ পেতে হয়তো আগামী অর্থবছরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া থাকা সংস্থার সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে চমেক ও রেলওয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির মজুমদার বলেন, ‘আমরা বিল আদায়ের ব্যাপারে সব সংস্থাকে তাগাদা দিচ্ছি। এর মধ্যে চমেক ও রেলওয়ে বিগত ছয় মাসে কোনো প্রকার বিল পরিশোধ না করায় তাদের সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য সংস্থায়ও অভিযান পরিচালিত হবে। তবে যেসব সংস্থা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কিছুটা বিল পরিশোধ করছে, তাদের শিথিলভাবে দেখা হচ্ছে। কেননা মন্ত্রণালয়ের থেকে বরাদ্দ না পেলে, এ সংস্থাগুলোর বকেয়া বিল পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। এরপরও রাজস্ব আদায়ে আমাদের তৎপরতা তো রাখতেই হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রায় সবগুলো সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তাদের বকেয়ার পরিমাণ ৬১ কোটি টাকা। আজকেও আমরা সিটি মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে অনুরোধ করেছি।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৬ মাসের বিল বকেয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা বকেয়া বিলের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মিটারে বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। তাই কলেজের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যেহেতু চমেক হাসপাতালে হাজার হাজার রোগী ভর্তি রয়েছে তাই হাসপাতালের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। এই বিদ্যুৎ বিলের বকেয়ার বিষয়টি চমেক হাসপাতাল প্রধানকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। একইভাবে ২ কোটি ১২ লাখ টাকা বকেয়া রাখার কারণে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের দপ্তর অফিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তাদেরকেও কয়েকবার বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে জানিয়েছি।’