পুলিশের ‘রহস্যময়’ ধাওয়া, গরু চোরের দল হাওয়া
গোয়াল ঘরে বসে অনবরত আহাজারি কৃষক বদিউল আলমের। বাকরূদ্ধ পাড়া-প্রতিবেশি আত্বীয় স্বজন সবাই। কাঁদতে কাঁদতে বদিউল আলম বলছিলেন, ওরাতো গরু ছিলনা, ওরা আমার সন্তান। নিজেরা কম খেয়ে- না খেয়ে গরুকে খাইয়েছি। সন্তানদের শখ-আহ্লাদ পূরণ করিনি। তবু গরুর পেট কখনো খালি হতে দিইনি।’ শুক্রবার দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ড পৌরসভার শেখপাড়া গ্রাম থেকে কাভার্ডভ্যানযোগে সন্তানসম চারটি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল।
অবাক করা তথ্য হলো, রাস্তায় ওই কাভার্ডভ্যানটি দেখে সন্দেহ হলে টহল পুলিশকে জানায় এক সিএনজি অটোরিকশা চালক। তবে মাইক্রোবাস নিয়ে ধাওয়া করেও গরুবোঝাই ভারী ওই কাভার্ডভ্যানটি ধরতে পারেনি পুলিশ!
পুলিশ এখন বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মামলা করলে শিব চতুদর্শী পূজার পর তদন্ত করে দেখবে! অথচ এদিকে সন্তানতুল্য চারটি গরু হারিয়ে আহাজারি থামছেইনা বদিউল আলমের।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে চারটি গরুকে একটি ছোট কাভার্ডভ্যানে উঠাতে দেখে এক সিএনজি অটোরিকশা চালকের সন্দেহ হয়। এরপরই পিছন থেকে মাইক্রোবাস গাড়িতে পুলিশের একটি টহল টিমকে আসতে দেখেন তিনি। তখনই গরু চুরির বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ কাভার্ড ভ্যানটিকে পিছন থেকে ধাওয়া শুরু করে। এরপর কি হয়েছে তারা আর জানেন না।
মো. নুর মোস্তফা নামে ওই সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, ‘ঘটনা দেখে আমি পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশও গাড়িটিকে ধাওয়া করে। তাদের পিছনে আমিও গিয়েছি। কিন্তু ওই দুটি গাড়ির গতি বেশি হওয়ায় শুকলালহাট বাজার থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আমি চলে আসি। মাইক্রোবাসের গতি বেশি তাই চোরদের কাভার্ডভ্যানকে ধাওয়া করে অবশ্যই ধরে ফেলার কথা। কিন্তু কেন ধরতে পারেনি বা কি হয়েছে আমি জানিনা।’
বদিউল আলম বলেন, গরুর খাদ্যে ও যত্নে ঘাটতি না হওয়ার জন্য ঘর-সংসার কিছুই দেখিনি। ইচ্ছা ছিল সামনের কোরবানীর ঈদে গরু বেচে ছেলে মেয়ের চাহিদা পূরণ করব। দুই লাখ টাকা ঋণ করে গরু কিনেছি। এখন ঋণ কিভাবে পরিশোধ করব? আমার মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় নাই।”
বদিউল আলমের ছেলে রিয়াজ বলেন, ‘একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক গরু চুরির ঘটনা দেখে পুলিশকে জানালে পুলিশের একটি মাইক্রোবাস চোরদের ধাওয়া করে। কিন্তু পরে আর কি হয়েছে আমাদের কিছুই জানায়নি। আমরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
সিএনজি অটোরিকশা চালক নিজ উদ্যোগে পিছু নিয়ে অর্ধেক থেকে ফিরে আসার কথা বললেও সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিন বলছেন ভিন্ন কথা। ওসি কামাল উদ্দিন বলেন, ‘সিএনজি অটোরিকশা চালককে সাথে নিয়ে পুলিশ গাড়িটিকে ধাওয়া করলেও আটকাতে সক্ষম হয়নি। তবে ভুক্তভুগী কৃষক মামলা দায়ের করলে বিষয়টি চলমান শিব চতুর্দশী মেলার পরে তদন্ত করে দেখা হবে।’
প্রসঙ্গত সীতাকুণ্ডে গত দুই/তিন মাস ধরে প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। একের পর এক সাংবাদিকের বাড়ির পাশাপাশি, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, কৃষক কেউ বাদ পড়েনি ডাকাতদের কবল থেকে। গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে কেদারখীল গ্রামের বোরহান ও তার শ্বশুরকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে ডাকাতের দল। একই রাতে পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের মান্নানদের বাড়িতে দুই প্রবাসীর ঘরে ডাকাতি করে কয়েক লাখ টাকার মালামাল লুট করে ডাকাতরা। পরদিন এয়াকুব নগরের প্রবাসী দুই ভাইয়ের ঘরে ডাকাতি করে সংঘবদ্ধ ডাকাতরা। ১৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সাংবাদিক শেখ সালা উদ্দিনের বাড়িতে ডাকাতি করে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও দুই লাখ নগদ টাকা লুট করে ডাকাতরা। এর কয়েকদিন আগে ডাকাতি হয় সাংবাদিক হাসান ফেরদৌসসহ কয়েকটি বাড়িতে। এছাড়া ও প্রায় প্রতি রাতেই কোথাও না কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে