পুলিশের সমিতি-অ্যাসোসিয়েশন স্থগিত, ১২ নির্দেশনা আইজিপির
পুলিশের সকল খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও গুলির হিসাব করা, বাহিনীর সদস্যদের সবরকম সমিতি-অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম স্থগিত করাসহ ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম।
সরকার পতনের পর নৈরাজ্যের মধ্যে সারা দেশে থানায় হামলা এবং বিপুল সংখ্যক পুলিশের হতাহতের ঘটনায় পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার এ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়েই এসব নির্দেশনা দেন নতুন আইজিপি।
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মধ্যে গত সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার পতন ঘটে। এরপর দেশজুড়ে থানাসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে একের পর এক হামলা শুরু হয়। অনেক থানায় ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। থানাগুলো পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। বাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত হন। অন্যরা নিরাপদে সরে যেতে থাকেন। তাতে পুলিশি সেবাবিহীন এক নজিরবিহীন অবস্থা তৈরি হয় বাংলাদেশে। এই পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার রাতে নতুন আইজিপি হিসেবে ময়নুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বুধবার (৭ আগস্ট) সকালেই আইজিপি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করে পুলিশকে কাজে ফেরানোর উদ্যোগ নেন ময়নুল। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের স্ব স্ব ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
আইজিপি স্বাক্ষরিত ‘সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পুনর্বহাল সংক্রান্ত জরুরি নির্দেশনা’ নামে একটি অফিস আদেশে বলা হয়, বিরাজমান বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিবর্তনমূলক কার্যক্রমের ফলে সদ্য সংঘটিত ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে অভূতপূর্ব গণদাবি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
এ আন্দোলনকে দমন-পীড়ন ও কথিত শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণের নামে পুলিশের কিছু উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে বল প্রয়োগের আইনসম্মত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি, মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মানও প্রদর্শন করা হয়নি। কর্মকৌশল এবং নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, আহত ও নিগৃহীত হয়েছেন। একই সাথে ধ্বংসযজ্ঞের ফলে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আইজিপি বলেন, যারা (পুলিশ) আহত হয়েছেন, তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিটি হত্যার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সকল পুলিশ সদস্যের জন্য আইন ও বিধি অনুযায়ী সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
পুলিশের চেইন অব কমান্ড ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য ১২ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয় আদেশে।
১. রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিওএম, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), সকল মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশ লাইন্সসহ অন্যান্য সকল পুলিশ ইউনিটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ফোর্সের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড পুনরুদ্ধার ও পুনপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২. ঢাকা মহানগর পুলিশের রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিওএম, এপিবিএন, সকল মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষায়িত সব পুলিশ ইউনিটের সব অফিসার এবং ফোর্সকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে।
৩. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে এবং হাইওয়ে থানার অফিসার ও ফোর্সদেরকে স্ব স্ব ইউনিটের পুলিশ লাইন্সে যোগ দিতে হবে।
৪. পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অপারেশন্স কন্ট্রোল রুম সক্রিয় করা, দায়িত্ব বণ্টন করা এবং সারা দেশের সাথে কার্যকর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৫. ফোর্সের মনোবল বৃদ্ধি এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের দাফন/সৎকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. পুলিশের সকল অস্ত্র-গুলির হিসাব, খোয়া/হারানো অস্ত্র-গুলির হিসাব, সিসি (কমান্ড সার্টিফিকেট)সহ সকল ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে।
৮. সকল অস্ত্রগারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় গার্ড অতি সত্ত্বর মোতায়েন করতে হবে। সিনিয়র অফিসাররা পুলিশ রেগুলেশন্স অনুযায়ী অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা, অস্ত্র-গুলি ইস্যু ও জমা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার লেখার বিষয়ে বিদ্যামান বিধিবিধান পালন নিশ্চিত করবেন।
৯. মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপাররা নিজ নিজ এলাকার জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। এই কমিটি থানা এবং থানা এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আপদকালীন সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
১০. থানার সকল অফিসার ও ফোর্সের ব্যক্তিগত হেফাজতে থাকা অস্ত্র-গুলি স্ব স্ব পুলিশ লাইনসে বা নিকটস্থ অস্ত্রগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল।