পূর্ণতা পাচ্ছে মেট্রোরেল, মতিঝিল থেকে উত্তরা যাতায়াত ৩১ মিনিটে
ঢাকা: পূর্ণতা পাচ্ছে মেট্রোরেল।ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করা হয়। সে সময় মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার দশ মাস পরে এসে আজ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পাচ্ছে ঢাকা মেট্রোরেল। আধুনিক এ গণপরিবহন আগামীকাল রোববার (৫ নভেম্বর) থেকে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
এমআরটি লাইন-৬ এর দ্বিতীয় অংশের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে মোট সাতটি। এর মধ্যে প্রথমে চালু হবে তিন স্টেশন— ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল। এরপর নভেম্বর মাসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন চালু হবে।তারপর আগামী দুই মাসের মধ্যে একে একে চালু হবে শাহবাগ, কারওয়ান বাজার ও বিজয় সরণি স্টেশন।
মতিঝিল ও গুলিস্তানের সচিবালয় এলাকায় দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য নানা সংস্থার অফিস।কিন্তু এসব এলাকার আবাসিক ভবনে ভাড়া অধিক হওয়ায় স্বল্প ও মধ্য আয়ের চাকরিজীবীদের বড় একটা অংশ থাকেন মিরপুরে। কারণ মিরপুরে তুলনামূলক বাড়িভাড়া কম।ফলে মিরপুর এলাকার বসবাসকারীদের জন্যে মেট্রোরেল বড় সুবিধা বয়ে নিয়ে আসছে।
মতিঝিলের একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন শাহাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মিরপুর থেকে অফিসে আসতে প্রতিদিন সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। কিন্তু রোববার থেকে মাত্র ১৫ মিনিটেই অফিসে আসতে পারবো, এটা অনেক আনন্দের।তবে প্রথম দিকে কেবল সকালে মেট্রো চালু হওয়ায় খানিকটা হতাশার কণ্ঠ তিনি দাবি জানান, দ্রুত বিকালেও এই অংশে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করা উচিত।
মতিঝিলের বাসা থেকে মিরপুরের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে অফিস করেন ফজলেহ রাব্বি পিউল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার অফিস মিরপুর হওয়াতে চাকরি সুবাদে প্রতিদিনই মতিঝিল থেকে মিরপুর যাওয়া লাগছে, যেখানে আমার যেতে সময় লাগে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। ইনশাআল্লাহ মেট্রোরেল হওয়াতে এখন হয়ত আধাঘণ্টার মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব।
বিকেলে মেট্রোরেল চলাচল না করায় ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, যতদূর জানি মেট্রোরেল প্রথম দিকে শুধু সকালের শিফটে চালু হচ্ছে। তাই দেখা যাচ্ছে যে ফেরার পথে ওই আগের মতোই ধকল খেয়ে পৌঁছাতে হবে। বলা যায় ব্যাপারটা হয়ে গেছে অনেকটা এমন যে সকালে খাচ্ছি বিরিয়ানি আর রাতে খাচ্ছি ডাল ভাত।
বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল করার কারণে ৮টায় যাদের অফিস তাদের পৌঁছাতে দেরি হয়ে যেতো। যাত্রীদের এ দাবির প্রেক্ষিতে আগামী ৫ নভেম্বর থেকে মেট্রোরেল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে চলাচল শুরু করবে।
এদিকে রাত ৮টার পরে যাদের এমআরটি বা র্যাপিড পাস রয়েছে তারা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবেন।
কিন্তু যেসব যাত্রী স্টেশন থেকে একক টিকিট কাটবেন তারা রাত ৮টা পর্যন্তই সর্বশেষ মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন।
যদিও আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের যাত্রীরা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবেন। ধীরে ধীরে এ অংশেও সময় বাড়ানো হবে।
উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৩১ মিনিট, আর ভাড়া লাগবে ১০০ টাকা। তবে যাদের র্যাপিড পাস রয়েছে তারা ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাবেন।
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া ৪০ টাকা। মতিঝিল থেকে উত্তরা সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ ৯০ টাকা, পল্লবী ৮০ টাকা, মিরপুর- ১১ নম্বর ৭০ টাকা, মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া ৬০ টাকা, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও ৫০ টাকা, বিজয় সরণি ৪০ টাকা, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার ৩০ টাকা, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবলায় ২০ টাকা। অন্যদিকে ফার্মগেট থেকে মতিঝিলের ভাড়া ৩০ টাকা।
মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট ৩০ টাকা ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে ভাড়া লাগবে ৪০ টাকা। মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া পড়বে ৫০ টাকা। মিরপুর-১০ থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যেতে লাগবে ৬০ টাকা। ফার্মগেট স্টেশন থেকে উঠে কারওয়ান বাজারে নামলেও এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া দিতে হবে।
তবে একই ভাড়া দিয়ে যাওয়া যাবে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন পর্যন্ত। আর ফার্মগেট থেকে সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা।