পোস্ট অফিস থেকে গায়েব সঞ্চয়পত্রের দুই লাখ টাকা, দিশেহারা পারুল!
তিল তিল করে জমানো দুই লাখ টাকা পাঁচ বছর সাত মাস আগে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পোস্ট অফিসে গচ্ছিত রেখেছিলেন পারুল বেগম। কিন্তু হঠাৎ জানতে পারেন, তিনি যেই পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র খুলেছিলেন সেখানকার পোস্ট মাস্টার গ্রাহকদের দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ফেলেছেন।
সেখানে তারও পুরো টাকা গায়েব হয়ে গেছে। তাই পৃথিবীটা যেন অন্ধকার হয়ে এসেছে পারুলের। কোনো উপায় না পেয়ে এরই মধ্যে তিনি আত্মহত্যারও চেষ্টা চালিয়েছেন। তার এই অবস্থা জানতে পেরে ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তিনি সঞ্চিত টাকা ফেরত পাবেন। তবে এর জন্য তাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যিই কি টাকা ফেরত পাবেন, তা ভেবেই এখন দিশেহারা পারুল।
অর্থ আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী তানোর উপজেলা পোস্ট অফিসে। তানোর পৌর শহরের কুঠিপাড়ায় থাকা উপজেলা পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) মুখছেদ আলী কৌশলে প্রায় ২৫০ গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর অন্যদের মত সেই পোস্ট মাস্টারের প্রতারণার শিকার হয়েছেন পারুল বেগমও। তিনি তানোর পৌর শহরের গোকুল এলাকার মৃত এনামুল হাসান রনির স্ত্রী।
গচ্ছিত অর্থ ফিরে পেতে তিনি গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুর ১২টার দিকে পোস্ট অফিসে যান। সেখানে নিজের সঞ্চয়পত্রের দুই লাখ টাকার কোনো হদিস না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। পরে পুলিশসহ পোস্ট অফিসের লোকজন পারুল বেগমকে কোনোভাবে থামিয়ে শান্ত করেন। এমন একটি ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে ভুক্তভোগী পারুল বেগম জানান, পাঁচ বছর সাত মাস হলো এই পোস্ট অফিসে দুই লাখ টাকা রেখেছেন তিনি। হঠাৎ করেই জানতে পারেন তার পুরো টাকাই গায়েব! তার স্বামী ব্লাড ক্যানসারে মারা গেছেন। তার এতিম শিশু আছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সেই মেয়ে এখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গেল নভেম্বরে তিনি টাকা পাবেন বলে ডিসেম্বর মাসে মেয়ে ও জামাতাকে এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এরপর থেকে দিনের পর দিন ঘুরছেন। পোস্ট অফিসের লোকজন বলেন, ‘আজ আসো, কাল আসো। ’ কিন্তু দিন যায়, মাস যায় এভাবে ঘোরালেও তার সঞ্চিত টাকা ফেরত দিচ্ছেন না কেউ। এতে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন তিনি। কী করবেন কোথায় যাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। তাই আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।
এদিকে কেবল পারুল বেগমই নন, অভিযোগ উঠেছে- রাজশাহীর তানোর উপজেলার এই পোস্ট অফিসে আরও প্রায় ২৫০ গ্রাহকের জমাকৃত টাকা এভাবেই গায়েব করেছেন তৎকালীন পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলী। তিনি সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বর্তমান পোস্ট মাস্টার আব্দুল মালেক জানান, তার আগের পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলীর সময়ে এই অফিসে প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এই পোস্ট অফিসের গ্রাহক প্রায় ৩০০ জন। এখন তাদের মধ্যে ঠিক কতজনের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে, সেটি তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। তবে পোস্ট অফিসে এসে পারুল বেগম নামের এক নারী বৃহস্পতিবার দুপুরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তাকেসহ আরও কজন ভুক্তভোগীকে রাজশাহী বিভাগীয় পোস্ট অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের সঙ্গে ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলেন। বিষয়টি এখন তারাই দেখছেন।
রাজশাহী ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান বলেন, অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে অভিযোগ ওঠার পর এই বিষয়টি জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন প্রক্রিয়া অনুযায়ী ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে, মামলা হবে। তবে যেসব ভুক্তভোগী আসছেন, প্রত্যেককেই আমরা আশ্বস্ত করছি যে, সঞ্চিত টাকা তারা টাকা ফেরত পাবেন। তবে হয়তো একটু সময় লাগবে।
রাজশাহীর তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, ঘটনাটি গত ২৩ মে দুপুরের। ভুক্তভোগী পারুল বেগম পোস্ট অফিসে গিয়ে তার টাকা ফেরত না পেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন। তখন সংশ্লিষ্টরা থানায় খবর দেন। এ সময় থানা থেকে পুলিশ পাঠানো হয় এবং পরে তাকে কোনোভাবে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়। এরপর পোস্ট অফিসের লোকজন তাকে রাজশাহী ডাক বিভাগের অফিসে নিয়ে যান। তারপর এই ঘটনায় থানায় আর কেউ অভিযোগ দেয়নি এবং জিডি বা মামলাও করেনি।