জাতীয়

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা: অ্যাটর্নি জেনারেল-এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা বিবৃতি

প্রধান বিচারপতির সরকারী বাসভবনে বিএনপি-জামাতের দুষ্কৃতিকারীদের অতর্কিত হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল-এর পক্ষ হতে প্রতিবাদ ও নিন্দা বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি রূপে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে অতি স্বল্পতম সময়ে দেশে সুশাসন, মৌলিক অধিকার, মানবসত্তার মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন করেন যা পরের বছরেই জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও ন্যায় বিচারের মানদণ্ড সমুন্নত রাখার সর্বাপেক্ষা গুরু দায়িত্ব বর্তায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উপর এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনের শাসন ও নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে সে দায়িত্ব অতি গুরুত্বের সাথে সুচারুরূপে পালন করে আসছে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় তিনটি প্রধান অঙ্গের অন্যতম একটি অঙ্গ হচ্ছে বিচার বিভাগ এবং এই বিভাগের প্রধান হিসেবে দেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনকালে তার জন্য নির্ধারিত কাকরাইলস্থ প্রধান বিচারপতির সরকারী বাসভবনে পরিবারবর্গসহ বসবাস করেন।

গতকাল ২৮শে অক্টোবর দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল রাজধানীতে তাদের দলীয় সভা আয়োজন করার জন্য ডিএমপি কমিশনার বরাবরে আবেদন করলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জনজীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য নির্ধারিত শর্তে দুটি দলকেই তাদের সভা করার অনুমোদন প্রদান করেন।

আমি অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, অনলাইন পত্রিকা, টেলিভিশন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে লক্ষ্য করেছি যে, রাজনৈতিক দলগুলির নির্ধারিত সভা-সমাবেশ চলাকালীন সময়ে, দুপুর ১.০০ ঘটিকায় বিএনপি ও জামাত-এর পূর্ব নির্ধারিত রাজধানীর পল্টনস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সভায় অংশগ্রহণকারী কিছু উগ্র সমর্থক গোষ্ঠী রাজধানীর নয়া-পল্টন, মগবাজার এলাকা, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, কাকরাইল এলাকায় ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নি সংযোগ ও সংঘর্ষ এর মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনায় লিপ্ত হয়েছে এবং তারা এক পর্যায়ে কাকরাইলস্থ বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের সরকারী বাস ভবনে নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের সরকারী বাসভবনের নামফলক ও প্রবেশদ্বারে নির্বিচারে ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে তারা ভবনের প্রবেশদ্বার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং মূল ভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভবনের ক্ষতি সাধন করে। পরবর্তীতে এই উগ্রবাদী গোষ্ঠী কাকরাইল মোড়ে অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেয় এবং সেখানে বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা পুলিশের সাথেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

তারা প্রকাশ্য দিবালোকে নির্দয়ভাবে পুলিশ সদস্যদেরকে প্রহার করে এবং আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এতে ঘটনাস্থলেই একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং হাসপাতালে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষ ও পুলিশ চিকিৎসাধীন আছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয় । এই ঘটনার মাধ্যমে দেশের সমগ্র বিচার বিভাগ ও মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার আশ্রয়স্থলের প্রতি চরম অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা প্রদর্শিত হয়েছে। তাদের এহেন কার্যক্রম রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। বহির্বিশ্বের কাছে বিচার বিভাগের মান-মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে যা বিচার বিভাগের উপর এক ধরনের হুমকি স্বরূপ বলেই আমি মনে করি

বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি’র সরকারী বাসভবনে নজিরবিহীন ও ন্যাক্কারজনকভাবে বিএনপি-জামাত উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হামলা পুলিশ হত্যা ও দেশ ব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনায় বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহের কাছে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিসহ তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d