আন্তর্জাতিক

প্রবল শক্তিতে আছড়ে পড়ল হারিকেন বেরিল

আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট হারিকেন বেরিল প্রবল শক্তি নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়েছে। এতে করে সমগ্র অঞ্চলে দুর্ভোগে পড়েছেন বহু মানুষ। ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে এবং বহু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এর আগে হারিকেন বেরিল ‘চরম বিপজ্জনক’ ঝড়ে পরিণত হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হারিকেন বেরিল গ্রেনাডার ক্যারিয়াকো দ্বীপে আছড়ে পড়েছে বলে মার্কিন জাতীয় হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে। শক্তিশালী এই হারিকেনটি গত কয়েক ঘণ্টায় আরও শক্তি সঞ্চয় করেছে এবং ওই অঞ্চলে আগেই প্রাণঘাতী বাতাস ও বিপজ্জনক ঝড়বৃষ্টির সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল।

গ্রেনাডার প্রধানমন্ত্রী ডিকন মিচেলের মতে, “আধ ঘণ্টার মধ্যে ক্যারিয়াকো চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।”

বার্বাডোস, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইন এবং টোবাগোতেও হারিকেন সতর্কতা কার্যকর রয়েছে।

এর আগে বিধ্বংসী ঝড় এই অঞ্চলে আঘাত হানার আগে বিমানবন্দর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলজুড়ে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।

হারিকেন বেরিলের উপকূলের কাছে এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রোববার রাতে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলজুড়ে বহু সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এছাড়া এই অঞ্চলের নেতারাও জনসাধারণকে সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী ডিকন মিচেল সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “আমরা এখনও বিপদমুক্ত হইনি।”

এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গ্রেনাডাও বেশ কিছু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হয়েছে, যা দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে এবং এই আবহাওয়া ও অন্যান্য সতর্কতা সংক্রান্ত সরকারি আপডেট পাওয়ার ক্ষেত্রেও মানুষকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি)-এর সর্বশেষ আপডেট অনুসারে, হারিকেনটির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ মাইল বা ২৪১ কিলোমিটার। ঝড়টি সেসময় আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল বলেও জানানো হয়।

জ্যামাইকাতেও হারিকেন সতর্কতা কার্যকর রয়েছে, যার অর্থ এই অঞ্চলটিতে বুধবারের মধ্যে হারিকেন আঘাত হানতে পারে।

সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনের প্রধানমন্ত্রী রাল্ফ গনসালভেস বলেছেন, এটি কোনো রসিকতা নয়। এসময় ক্যারিবীয় অঞ্চলে অতীতের হারিকেনের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

নিজের সরকারি বাসভবন থেকে দেওয়া ভাষণে গনসালভেস জানান, তিনি তার বেসমেন্টে আশ্রয় নিচ্ছেন। তার ভাষায়, ‘ছাদ, অবশ্যই ছাদের পুরোনো অংশ ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ মাইল গতিবেগের বাতাসে টিকে নাও থাকতে পারে। আমি নিচে (বেসমেন্টে) যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এনএইচসি বলেছে, এর আগে সোমবার সকালের দিকে কিছুটা দুর্বল হয় ক্যাটাগরি-৩ হারিকেন বেরিল। পরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঝড়টি আরও শক্তি সঞ্চয় করে ক্যাটাগরি-৪ ঝড়ে পরিণত হয়। এ সময় ঝড়ের কেন্দ্রে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯৩ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে।

এনএইচসি আরও বলেছে, হারিকেনটির শক্তির এই ওঠানামা চলতে পারে, তবে উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের বেশ কিছু অংশকে ‘সম্ভাব্য বিপর্যয়কর বাতাসের ক্ষতির’ জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত।

মার্কিন এই হারিকেন সেন্টার বলেছে, মঙ্গলবার সকালের দিকে উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে বিপর্যয়কর গতিবেগের বাতাস নিয়ে আঘাত হানতে পারে এই ঝড়। এনএইচসির সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, বেরিল অত্যন্ত বিপজ্জনক হারিকেন হিসেবে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ঝড়ের মূল অংশটি উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের মধ্য দিয়ে পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।

সংস্থাটি আরও বলেছে, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস এবং গ্রেনাডা ক্ষয়ক্ষতির সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় এসব অঞ্চলে হারিকেন আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে ঝড়ের তাণ্ডবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে টোবাগো কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া সোমবার দেশটির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির হাসপাতালগুলোতে সোমবার কোনও অস্ত্রোপচার হবে না বলেও আগেই নাগরিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

হারিকেন বেরিলের প্রভাবে সোমবার দিনভর বার্বাডোস ও উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জজুড়ে ৮ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এর ফলে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে এনএইচসি।

এদিকে, পুয়ের্তো রিকো ও হিস্পানিওলার দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় উঁচু জলোচ্ছ্বাস ও সামুদ্রিক ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, আটলান্টিক মহাসাগর লাগোয়া অঞ্চলে হারিকেনের মৌসুম ১ জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। চলতি বছরে ওই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি হারিকেন আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।

ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) সতর্ক করে বলেছে, উত্তর আটলান্টিক অঞ্চল এই বছর সাতটি বড় হারিকেন পেতে পারে। যদিও এক মৌসুমে সেখানে গড়ে তিনটি হারিকেন হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d