আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনেরও রাষ্ট্র গঠনের অধিকার আছে : চীনা রাষ্ট্রদূত

ইসরায়েলের মতো ফিলিস্তিনেরও রাষ্ট্র গঠনের অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা করেছে ইসরায়েলিরা। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার চিন্তা কে করবে?’

সোমবার (১৬ অক্টোবর) গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদানের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত।

ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘ইহুদি জাতি পৃথিবীতে এখন আর গৃহহীন নয়। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা কবে তাদের ঘরে ফিরবে? বিশ্বে অনেক অন্যায় আছে, কিন্তু ফিলিস্তিনের প্রতি যে অবিচার তা অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ দুর্ভোগ, যা চলতে দেওয়া যায় না’।

সমাধান হিসেবে দুই রাষ্ট্র ও একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এর মাধ্যমেই ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল শান্তিতে সহাবস্থান করতে পারে এবং আরব ও ইহুদিরা সম্প্রীতিতে বসবাস করতে পারে।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এতে ইসরায়েলে এক হাজার ৩০০ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হয়। জবাবে সেদিনই পাল্টা হামলা শুরু করে দখলদার ইসরায়েল। শক্তিশালী এসব বোমার আঘাতে ধ্বংস হয় গাজার অনেক আবাসিক এলাকা। বাড়তে থাকে মৃত মানুষের সংখ্যা। মৃতের সংখ্যা এতটাই বাড়ছে যে কবরগুলোতে মরদেহ দাফনের আর জায়গা নেই।

হামাসের হামলার পরপরই গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ইসরায়েল। দুই দিন পর গত সোমবার পুরোপুরি গাজা অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেয় দখলদার ইসরায়েল। বন্ধ করা হয় গ্যাস, পানি, খাবার ও জ্বালানি সরবরাহ। জ্বালানির অভাবে গত বুধবার গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জেনারেটর চালিয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা চলছিল। তবে জ্বালানির যে মজুত ছিল, তা শেষের দিকে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস। চতুর্দিক থেকে ইসরাইলি বাহিনী গাজা অবরোধ করে রাখায় সেখানে কোনো ত্রাণ সামগ্রী বা খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন গাজাবাসী।

চলমান সংঘাত বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ বন্ধের জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করতে হবে। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া থামাতে হবে এবং পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয় এ ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা এখন শীর্ষ অগ্রাধিকার বলে চীন বিশ্বাস করে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার ও সহায়তার পথ খুলে দেওয়া এবং গুরুতর মানবিক বিপর্যয় রোধ করা অপরিহার্য।

ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে জাতিসংঘকে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে, যত দ্রুত সম্ভব আন্তর্জাতিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সংঘাত প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে শান্ত থাকার ও সংযম প্রদর্শন, ন্যায্য অবস্থান নিয়ে সংঘাত কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্বার্থে আরও বড় আঘাত এড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d