ফেনীতে বন্যার পর দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ
জেলায় বন্যা পরিস্থিতির পর ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
গত কয়েকদিন ধারণ ক্ষমতার দশগুণ বেশি রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডকে নতুন ভবনের ছয়তলায় স্থানান্তর করা হয়। ছয়তলা ভবনে ওঠানামার জন্য সিঁড়ি ব্যাতীত বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে রোগীদের পড়তে হচ্ছে বাড়তি বিড়ম্বনায়।
তবে হাসপাতালের তত্বাবধয়ক আবুল খায়ের মিয়াজী বলছেন, জায়গার অভাবে রোগীদের আপাতত ছয়তলায় নেওয়া হয়েছে। সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে।
হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২১ শয্যার বিপরীতে শিশু রোগীর সংখ্যা ছিল ১২৫ জন। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধার সংখ্যা বেশি। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী ৫৭৫ জন। ওয়ার্ডগুলোয় তিল ধারণের জায়গা নেই।
হাসপাতালের নতুন ভবনের ছয়তলায় গিয়ে দেখা যায়, চারটি বড় ইউনিট ও এর আশপাশের খালি জায়গায় রোগীরা শয্যা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, ছয়তলা ভবনে এসে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা নেওয়া কষ্টসাধ্য বিষয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে আগের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রোগীদের স্থানান্তরের দাবি করেন তারা।
ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সালেহ আহম্মদ জানান, দুই দিন আগে তার ডায়রিয়া হয়। এ হাসপাতালে আসার পর জরুরি বিভাগ থেকে তাকে নতুন ভবনের ছয়তলায় যেতে বলা হয়। দুর্বল শরীরে যুবক ছয়তলায় উঠতে অনেক কষ্ট হয়ে গেছে। যারা বয়স্ক বা শিশু রোগী তাদের জন্য এখানে উঠে চিকিৎসা নেওয়া মহাকষ্টের বিষয়।
আফসার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন এতবড় সরকারি হাসপাতাল, অথচ এদের কোনো সঠিক ব্যবস্থাপনা নাই। হাসপাতালের লিফট অকেজো হয়ে আছে ঠিক করার কোনো নাম নেই। এটি ঠিক থাকলে রোগীদের সেবা নিতে কিছুটা সহজ হতো।
ফেনীতে বন্যার পর ডায়রিয়া প্রায় মহামারি আকার ধারণ করেছে। বন্যায় মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব; এই অবস্থায় হাসপাতালে এসেও অনেক সহজলভ্য ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, সরকারের উচিত এটি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সবিতা রায় বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যেসব ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে আমরা তা রোগীদের দিচ্ছি। যেগুলো আমাদের সাপ্লাইয়ে নেই কেবল সেসব ওষুধ কিনতে বলা হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীদের হাসপাতালের পক্ষ থেকে কলেরা স্যালাইন, খাবার স্যালাইন, স্যালবিউট্যামল সিরাপ, নাপা সিরাপ, ক্যানোলা, স্যালাইন সেট দেওয়া হচ্ছে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসিফ ইকবাল বলেন, বন্যার পর পর ফেনীর ৬ উপজেলা থেকে আসা ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগী আক্রান্ত রোগীদের চাপ বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এরপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি সেবা নিশ্চিত করতে। আমাদের জনবল ও জায়গার অভাব আছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক চিকিৎসক সংকটও রয়েছে। স্বল্প জনবল দিয়ে বৃহৎ পরিসরে সেবা সম্ভব নয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ছয়তলা ভবনের একমাত্র লিফট নষ্ট হয়ে আছে। এটি পরিবর্তন করে একটি আধুনিক লিফট স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের একটি অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতালের কাজ ইতোমধ্যে ইউনিসেফের অর্থায়নে চলমান। এটি সম্পন্ন হলে শিশু রোগীদের সেবা দিতে সমস্যা থাকবে না।