ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে করণীয়
ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে লগইন করতে পারছিলেন না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাইমা মারিয়াম। বারবার পাসওয়ার্ড লিখলেও তা ভুল বলছে ফেসবুক। ঠিক এমন সময় এক বন্ধবী ফোন করে জানাল, জাইমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিব্রতকর বিভিন্ন তথ্য ও ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করা হয়েছে। এ ধরনের পোস্ট না করার জন্য জাইমাকে অনুরোধ করে সে। আর তখনই জাইমা বুঝতে পারে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। অন্য কেউ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে।
এ ধরনের সমস্যা যেকোনো সময় যেকোনো ফেসবুক ব্যবহারকারীর হতে পারে।হ্যাকারদের উদ্দেশ্য থাকে যে কারো অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতার সুযোগ নেয়া। পাসওয়ার্ড চুরি কিংবা ডাউনলোড করা কোনো ক্ষতিকর অ্যাপ বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করাই মূল লক্ষ্য। কিছু ক্ষেত্রে তারা কম্পিউটারের প্রসেসিং পাওয়ারেরও দখল নিয়ে থাকে। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড বা চুরি হলে কী করতে হবে, চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।
অন্য সব অ্যাপের মতো হ্যাকাররা ফেসবুককেও টার্গেট করতে পারে। আর একবার নিরাপত্তার দেয়াল ভেদ করতে পারলে সহজেই অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে। ব্যবহারকারীদের জন্য এ ধরনের অভিজ্ঞতা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে বলে মনে হলে নির্ধারিত কিছু পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে পুনরায় সেটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া সম্ভব। আর একবার অ্যাকাউন্ট ফেরত পাওয়ার পর হ্যাকারদের হাত থেকে তা নিরাপদ রাখতে আপনার সিকিউরিটি সেটিংস রিভিউ করাও জরুরি।
অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে রিপোর্ট করতে হবে: ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে হ্যাক হওয়া। হ্যাকার আইডিতে প্রবেশ করে লগডইন সেশন ও ক্রিডেনশিয়াল পরিবর্তন করে দিলে লগইনে সমস্যা হয়। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে ফেসবুক ডটকম স্ল্যাশ হ্যাকড লিংকে প্রবেশ করে হ্যাক হওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
পরবর্তী সময় ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সম্পর্কিত ই-মেইল ঠিকানা বা ফোন নাম্বার ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট রিকভার করতে সহায়তা করবে।
ব্যবহারকারী যদি সেটিংসের চুজ ফ্রেন্ডস টু কনট্যাক্ট ইফ ইউ গেট লকড আউট অপশনটি চালু রাখে, তাহলে পরবর্তী সময়ে এ ফাংশন ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় সময় অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করা যাবে। এ ফাংশনের মাধ্যমে তিন-পাঁচজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে বাছাই করা যাবে।
ফিচার বা সুবিধাটি চালু করতে হলে লগইন পেজের ফরগটেন অ্যাকাউন্ট অপশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর ই-মেইল বা ফোন নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট সার্চ করতে হবে। অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়ার পর পূর্বনির্ধারিত বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নাম প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যাবে। তাদের কাছে এরপর একটি অ্যালার্ট এবং লিংক পৌঁছে যাবে, যাতে কেবল তারাই প্রবেশ করতে পারবেন।
লক পরিবর্তন করা: অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার হয়ে যাওয়ার পর সিকিউরিটি অ্যান্ড লগইন সেটিংসে গিয়ে পাসওয়ার্ড পরবর্তন অথবা ইউজ টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা টুএফএ চালু করা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টের ডাটায় অ্যাকসেস রয়েছে এমন যেকোনো সন্দেহজনক বা ক্ষতিকর অ্যাপ্লিকেশন মুছে দেয়ার পরামর্শ দেয় ফেসবুক। আপনি সেটিংসের অ্যাপস অ্যান্ড ওয়েবসাইট অপশন থেকে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে না এমন বা আপনার পরিচিত নয়—এমন অ্যাপস খুঁজে বের করে তা রিমুভ করে দিতে পারেন।
অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে তা দ্রুত বন্ধুদের জানিয়ে দিয়ে তাদের সাবধান করতে উৎসাহিত করে ফেসবুক। এর মাধ্যমে বন্ধুদের ওই অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেটি থেকে পাঠানো যেকোনো লিংক বা পোস্টে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্কবার্তা পাঠানো যায়। এছাড়া সেটিংসের লগইনস অ্যান্ড সিকিউরিটি অপশনের গেট অ্যালার্টস অ্যাবাউট আনরিকগনাইজড লগইনস-এ সাইন আপ করা যায়। অপশনটি নির্বাচিত থাকলে অপরিচিত যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্টে লগইন করা হলে সাবধান করবে।
ফেসবুকসহ যেকোনো নতুন অ্যাপ ও প্লাটফর্মে ক্ষতিসাধনে হ্যাকাররা প্রতিনিয়ত নিজেদের কৌশল বদলাতে থাকে। তাই সবসময় সতর্ক থাকা, সিকিউরিটি চেকের মাধ্যমে কার্যকরভাবে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদার ও হ্যাক হলে কী করতে হবে, তা জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।