ফ্রিল্যান্সিং করে শাহীনের এখন মাসিক আয় ৬ লাখ
২০ বছর বয়সে বাবাকে হারান। পরিবারে উপার্জনের কেউ ছিল না। আর্থিক সংকটের কারণে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াও কষ্টকর হয়ে ওঠে। তবু হাল ছাড়েননি। বাবার পেনশনের টাকা থেকে সংসারের খরচ চালিয়ে কষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। সংসারের অভাব ঘোচাতে রোজগার করার চিন্তা থেকে ২০১৬ সালে তথ্যপ্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সেই ফ্রিল্যান্সিং থেকেই এখন তার মাসিক আয় প্রায় ৬ লাখ টাকা।
বলছি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের পিপুলিয়া গ্রামের মো. শাহীনের (২৭) কথা। তথ্যপ্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আজ তিনি স্বাবলম্বী। নিজের পাশাপাশি হাজারো শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তিনি। বর্তমানে মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে স্নাতকোত্তর করছেন শাহীন।
শাহীন জানান, ২০১৬ সালে মানিকগঞ্জ শহরে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর একটি লিফলেট দেখে আগ্রহ জাগে। লিফলেটে দেয়া ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করি। এরপর অনলাইনে একটা পরীক্ষা নেয়া হয়। দুই দিন পরে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছি বলে আমাকে জানানো হয়। এরপরে মৌখিক পরীক্ষা দিই। মোট ৫ হাজার রেজিস্ট্রেশন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে হরিরামপুর উপজেলা থেকে আমি একাই নির্বাচিত হই। এরপর সেখান থেকে দুই মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ নেই। প্রতি সপ্তাহে ৬ দিন ৪ ঘণ্টা করে ক্লাস করি। ক্লাস শেষে বাসায় এসে ক্লাসের কাজ জমা দিতে গভীর রাত হয়ে যেতো।
এই পেশায় আগ্রহের প্রধান কারণ নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে জানান শাহীন। তিনি বলেন, এ পেশায় নানা প্রতিবন্ধকতাও ছিল। এখনকার মতো গ্রামে তখন ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। মডেম ব্যবহার করে ইন্টারনেটের গতিও খুব বেশি পাওয়া যেতো না। এছাড়া অনলাইনে আয় করে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তা গ্রামাঞ্চলের মানুষ জানে না বললেই চলে। প্রথমে আমার গ্রামের লোকেরা মনে করতো আমি কোনো অবৈধ উপায়ে উপার্জন করছি কিনা।
বেকারত্বকে না বলি, ঘরে বসে আয় করি স্লোগানে শাহীন বলড়া বাজারে ২০১৭ সালে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে একটি ট্রেনিং সেন্টার খুলেছেন। সেখানে চারজন প্রশিক্ষক রয়েছে। এছাড়া নিজের বাড়ির দোতলায় করা অফিসে কাজ করেন ৮ জন। কয়েকটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। এক লাখ টাকা বেতনে রেখেছেন একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। সবমিলিয়ে প্রতি মাসে তার আয় ১০-১২ লাখ টাকা। সব খরচ বাদে এখন প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় হয় তার।
শাহিন জানান, ২০১৭ সালে প্রথম কাজে ৫ ডলার আয় হয়। যা ওই সময়ের প্রায় ৪০০ টাকা। ২০১৯ সাল থেকেই মাসে ৩-৪ লাখ টাকা আয় হতো তার। ২০১৯ সালে বিয়ে করেন শাহীন। মা, স্ত্রী আর ছয় মাস বয়সী সন্তান নিয়ে শাহীনের সংসার। শাহীনের স্ত্রীও একজন ফ্রিল্যান্সার।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহীদের উদ্দেশ্যে মো. শাহীন বলেন, অনলাইনে প্রচুর কাজ রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তাই চাকরির পেছনে না ঘুরে, সঠিক পথে পরিশ্রম করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা একাগ্রতা নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারলে বেকারত্ব ঘোচানো সম্ভব।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, আমি জেনেছি শাহিনুর একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেকোন সাপোর্ট প্রয়োজন হলে আমরা তার পাশে থাকবো। এছাড়া আমাদের বেকার যুবকরা যেন ফ্রিল্যান্সিং এ উদ্বুদ্ধ হয় এবং বেকারত্ব ঘোচাতে ভূমিকা রাখে এজন্য শাহিনুরের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে একটি সেমিনার করার পরিকল্পনা রয়েছে।