দেশজুড়ে

বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নেমেছেন বিসিক শিল্পাঞ্চলের অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড নামের কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিক।

রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি, বাঁশ ও কাঠ ফেলে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এতে সড়কটিকে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিল্প পুলিশ ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশকে সড়কে দেখা গেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও (দুপুর ১২টা) বিক্ষোভ চলছিল।

কারখানার শ্রমিকরা জানান, গত ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজ করার পর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঈদের আগে বোনাস পেলেও মার্চ মাসের বেতন তাদের বকেয়া ছিল। কারখানার মালিক ঈদের আগেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও তা পাননি শ্রমিকরা। এতে ঈদের মধ্যে অর্থসংকটে দিন কাটিয়েছেন বলে জানান শ্রমিকরা।

ক্রোনী গ্রুপের রপ্তানিমুখী এ পোশাক কারখানাটিতে অন্তত ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।

কারখানাটির সুইং অপারেটর হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে ৮ এপ্রিল কারখানা বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। তখন আমাদের মোবাইলে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেনি তারা। গত ৮ মাস যাবত বেতন নিয়ে এভাবে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ।

আসাদ নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘ঈদের দিনও বারবার মোবাইল চেক করছি। এই মনে হয় বেতন ঢুকলো এই আশায়। কিন্তু কোনো বেতন আসেনি। আপনারা ভাবতেও পারবেন না ঈদের সময় বেতন না পেলে কীভাবে শ্রমিকরা দিন কাটায়। আমাদের এবার ঈদে কোনো আনন্দ ছিল না। অন্তত অর্ধেক বেতন দিলেও হতো।’

ঈদের আগে বেতন না পাওয়াতে গ্রামে যেতে পারেননি বলে জানান সুমাইয়া নামের আরেক শ্রমিক। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। বাসের টিকিট কেটেও গ্রামে যেতে পারেননি বলে দাবি তার।

এই নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমরা যারা ক্রোনীর শ্রমিক তাদের কোনো ঈদ বা উৎসব নেই। প্রতি মাসে বেতনের লাইগা রাস্তায় নামতে হয়। বাসের টিকিট কাইটাও বাড়ি (গ্রামে) যাইতে পারি নাই। টাকা নাই, বাড়ি গিয়া কী করমু? আমাগো ঈদের আনন্দটাও শ্যাষ কইরা দিছে ক্রোনীর মালিক। আমরা কী মানুষ না অন্য কিছু?’

ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) তছলিম উদ্দিন জানান, শ্রমিকরা মার্চ মাসের বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। তবে, তারা কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করছেন না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কাজ করছে। তবে অবরোধের কারণে অন্তত দুই কিলোমিটার যানজট দেখা দিয়েছে। আমরা শ্রমিকদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে এ সমস্যার সমাধানে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।

ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের আগে সব শ্রমিককে বোনাস দিয়েছি কিন্তু শিপমেন্ট ঠিকমতো না হওয়ায় মার্চের বেতনটা দিতে পারিনি। আমরা আগামী বুধবারের মধ্যে সকলের বেতন পরিশোধ করে দেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d