চট্টগ্রাম

বঙ্গবন্ধু টানেলকে আরও কার্যকরী করবে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে

টানেল যুগে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম।এই টানেল দেশের পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্সের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে।পদ্মা সেতু যেমন দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছে তেমনি এই টানেলও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

চট্টগ্রামে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সক্ষমতা তৈরি হওয়ায় জাপানসহ বিভিন্ন দেশ চট্টগ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে লক্ষ্য করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কর্ণফুলীর অপর পাড়ে নগরায়নের পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত গড়ে উঠবে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে তার পরিপূর্ণ সুফল পেতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের বিকল্প নেই। মিরসরাইয়ে দেশের বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশেষ করে বিনিয়োগকারীরা ঢাকা হতে এক থেকে দেড়ঘণ্টায় চট্টগ্রামে বিমানযোগে এসে পুনরায় চট্টগ্রাম হতে আরো দুই ঘণ্টায় মিরসরাই যেতে চাইবে না। এজন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে করা গেলে মাত্র দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে মিরসরাই শিল্প নগরে আসা যাবে। যা দেশের অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করবে।

নদীর তলদেশে টানেল এখন আর স্বপ্ন নয়; দৃশ্যমান বাস্তবতা। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল পদ্মা সেতুর পর দেশীয় সক্ষমতার অন্যতম দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা ও ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিজে তুলে নিয়ে একের পর এক মেগা প্রকল্প উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে কর্ণফুলীর দুই পাড়ের মধ্যে বিকল্প সংযোগের অপরিহার্যতা উপলব্ধি করে এই টানেল বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের এই বিপ্লব চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও লজিস্টিক্স হাবে পরিণত করার এক মহাপরিকল্পনার অংশ। বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর, মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যে সংযোগ রচিত হচ্ছে তা চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটিতে রূপান্তরিত করবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের সক্ষমতার ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করবে। এই টানেলের পরিপূর্ণ সুফল পেতে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন। সহজ শর্তে শিল্প প্লটসমূহকে বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে দ্রুত বরাদ্দ প্রদান করে নিশ্চিত করতে হবে সকল অবকাঠামোগত সুবিধা। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দ্রুত পণ্য খালাসের জন্য বেসরকারি জেটি নির্মাণ করা প্রয়োজন। কারণ দক্ষিণ প্রান্তে শিল্পায়ন হলে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের পরিমাণ আরো বাড়বে। এছাড়া মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি বে-টার্মিনাল প্রকল্প, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেইন মহাসড়ক, কুমিল্লা থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রকল্প, সাবরাং ট্যুরিজম প্রকল্পসহ এ অঞ্চলে যেসব মেগা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। কারণ সঠিক সময়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে টানেলের পরিপূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে না। টানেলকে ঘিরে চট্টগ্রামে শিল্পায়ন ও পর্যটনের যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে অতি শীঘ্রই একটি ডিটেইলড মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারায় গড়ে উঠেছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)। এ টানেলের মধ্য দিয়ে দুই পাড়ের সেতুবন্ধন রচিত হবে। শিল্পায়নের ফলে এ অঞ্চলের লাখো মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাবে এবং পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহণ প্রক্রিয়া সহজ হবে। ৭৮৩ একর জমি নিয়ে আনোয়ারায় চায়না ইকোনোমিক জোন স্থাপিত হচ্ছে। উক্ত এলাকায় চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। এখানে রপ্তানিমুখী জাহাজ শিল্প, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ফার্নেশ ও সিমেন্ট শিল্পসহ ৩১টি শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d