বজ্রপাতের সময় যে দোয়া পড়তে হয়
বজ্র-নিনাদের মাধ্যমে প্রকৃতি মহান আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্য, তাঁর পরিপূর্ণতা ও মহিমা বর্ণনা করে থাকে। এছাড়াও মেঘমালা সৃষ্টি ও বৃষ্টিপাত ঘটানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতারা মেঘের গর্জনের সৃষ্ট আতঙ্কে আরো বেশি আল্লাহর মহিমা ও গুণকীর্তন করেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তার (আল্লাহর) সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করে বজ্রধ্বনি এবং ফেরেশতারাও, সভয়ে (তাঁর তাসবিহ পাঠ করে)। তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দিয়ে আঘাত করেন। তার পরও তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতণ্ডা করে। অথচ তিনি মহাশক্তিশালী। ’ (সুরা রাদ, আয়াত : ১৩)
বজ্রপাতের কারণে প্রলয়ংকরী শব্দ হয়। বজ্রপাত কখনো কারো প্রাণ কেড়ে নেয়। আবার কখনো কারো কোনো ক্ষতি হয় না। এসব আল্লাহর নিরঙ্কুশ অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে।
বৃষ্টি আল্লাহর রহমতের নিদর্শন। কিন্তু কখনো আবার বৃষ্টি আজাবেও রূপ নিতে পারে। বৃষ্টির কারণে ও প্রাকৃতিক বৈরিতার কারণে অনেকে কষ্টে পড়তে পারেন। নানা ধরনের অসুবিধাও তৈরি হতে পারে। আয়েশা (রা.) বলেন, যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হতো এবং ঝোড়ো বাতাস বইত—তখন রাসুল (সা.) এর চেহারায় চিন্তার রেখা ফুটে উঠত। এই অবস্থা দেখে তিনি এদিক-সেদিক পায়চারি করতে থাকতেন এবং এ দোয়া পড়তে থাকতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা-ফিহা ওয়া খাইরা মা-উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা-ফিহা ওয়া শাররি মা-উরসিলাত বিহি। ’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এ বৃষ্টির মাধ্যমে প্রেরিত সমূহ কল্যাণ প্রার্থনা করছি, আর এ বৃষ্টির মাধ্যমে প্রেরিত সমূহ বিপদাপদ থেকে পরিত্রাণ চাই। ’ এরপর যখন বৃষ্টি হতো তখন মহানবী (সা.) শান্ত হতেন।
আয়েশা (রা.) আরো বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি যে লোকজন মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়ে থাকে, আর আপনি তা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন?’ এর জবাবে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি এ ভেবে শঙ্কিত হই যে বৃষ্টি আমার উম্মতের ওপর আজাব হিসেবে পতিত হয় কি না। কেননা আগের উম্মতদের ওপর এ পদ্ধতিতে (বৃষ্টি বর্ষণের আকারে) আজাব পতিত হয়েছিল। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৮৯৯)
তাই ঈমানদারদের উচিত, আকাশে বৃষ্টির ভাব দেখলে উল্লিখিত দোয়া পাঠ করা।
অন্যদিকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে মহানবী (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। এ দোয়া পাঠ করা হলে ইনশাল্লাহ বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বজ্রের আওয়াজ শুনতেন তখন এ দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা লা-তাক্বতুলনা বিগাজাবিকা ওয়া লা-তুহলিকনা বিআজা-বিকা ওয়া আ-ফিনা-ক্ববলা জা-লিকা। ’ অর্থাৎ হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার গজব দিয়ে হত্যা করে দেবেন না এবং আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন না। এসবের আগেই আপনি আমাকে পরিত্রাণ দিন। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৪৫০)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) বজ্রপাতের শব্দ শুনলেই পড়তেন, ‘সুবহানাল্লাজি ইয়ুসাব্বিহুর রা‘অদু বিহামদিহি। ’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৯২১৩)