দেশজুড়ে

বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় রেড ক্রিসেন্ট

চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গতদের সহায়তায় কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)। সংকটাপন্ন বন্যাকবলিত এসব এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রমের পাশাপাশি সকল ধরণের মানবিক সহায়তা দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সোসাইটির যুব স্বেচ্ছাসেবকরা।

এরইমধ্যে পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধার, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ, জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও পারিবারিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় সতর্কবার্তা প্রচার করছেন তারা। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে এক বিজ্ঞপিতে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় ২২ আগস্ট থেকে বিডিআরসিএসের পক্ষ থেকে ফেনীতে দুটি ভ্রাম্যমাণ পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ থেকে নোয়াখালী ও কুমিল্লাতে আরও তিনটি ভ্রাম্যমাণ পানি শোধনাগার স্থাপন করা হবে।

ইতোমধ্যে বন্যা উপদ্রুত জেলাগুলোর জন্য দুই হাজার পরিবারের জন্য সাত দিনের ফুড প্যাকেজ (সাড়ে সাত কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি চিনি, এক লবণ কেজি, এক লিটার সয়াবিন তেল ও আধা কেজি সুজি) বরাদ্দ দিয়েছে সোসাইটি, যা সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়া সাপেক্ষে পাঠানো হবে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে তিন হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার (তিন কেজি চিড়া, এক কেজি চিনি, ২৫০ গ্রাম বিস্কুট, দুই লিটার পানি, ১০ পিস খাবার স্যালাইন, ছয়টি মোমবাতি ও একটি দিয়াশলাই) বিতরণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সোসাইটির কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম ইউনিটের নিজস্ব উদ্যোগে এবং জাতীয় সদরদপ্তরের সহায়তায় রান্নাকরা ও জরুরি শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, আকস্মিক বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষদের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও ত্রাণ পৌঁছে দিতে আমরা আমাদের সব ধরনে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে আছি। এরইমধ্যে বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অগ্রণী ভূমিকায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন ও বিকাশ। ভয়াবহ এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমাজের সব স্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি।

সোসাইটির উদ্যোগে ইতোমধ্যে ইউএসএআইডির অর্থায়নে আইএফআরসির মাধ্যমে আড়াই লাখ ডলারের সমপরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকার অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে, যা দিয়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার পরিবারের মাঝে সাত দিনের ফুড পার্সেল এবং তিন হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ছয় হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আমেরিকান রেড ক্রস ও সুইডিশ রেড ক্রস থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে, যা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোয় প্রয়োজনীয় মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় ১০ হাজার পরিবারের মাঝে সাতদিনের ফুড প্যাকেজ প্রদানে সম্মত হয়েছে গ্রামীণফোন লিমিটেড। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি অনুযায়ী পানযোগ্য নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পাঁচটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের জন্য প্রয়োজনীয় সকল খরচ বহন করবে টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি। বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিডিআরসিএসকে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় দেড় কোট টাকার আর্থিক সহায়তা দেবে।

চলমান বন্যায় সোসাইটির অধিকসংখ্যক বন্যার্ত পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে সোসাইটির পক্ষ থেকে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ চলমান সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, দানশীল ব্যক্তিবর্গ ও প্রবাসীদের নিকট সহায়তার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। সোসাইটির ওয়েবসাইটের ভিজিট করে ডোনেট করা যাবে।

সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আযম জানান, বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ইউনিটগুলোর সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেচ্ছাসেবকরা আন্তরিকতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করছেন। বন্যার্তদের মানবিক সহায়তা প্রদান ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে বরাবরের মতোই আছে রেড ক্রিসেন্ট। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত ১৫ জেলায় ইউনিট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল না ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d