খেলা

বাংলাদেশকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে সেমিতে আফগানিস্তান

নাটকে ভরা এক ম্যাচ। শেষে বাংলাদেশের জন্য জমা হলো হতাশা, যেন বরাবরের মতোই। সেমিফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ মেলানোর মতো ব্যাটই করছিল বাংলাদেশ, কিন্তু হুট করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এসে থামিয়ে দিলেন ওই চেষ্টা। পরে ম্যাচই হারতে হলো। এর আগে বোলাররা করেছিলেন দুর্দান্ত।

মঙ্গলবার আর্নেস ভ্যাল স্টেডিয়ামে বৃষ্টি আইনে আফগানিস্তানের কাছে ৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান করে আফগানিস্তান। পরে ওই রান তাড়া করতে নেমে ১০৫ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে ১২ ওভার ১ বলে জিততে পারলে সেমিফাইনালে যেতো তারা।

কিন্তু জয় তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষায় থাকা আরেক দল অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে সেমিতে চলে গেছে আফগানরা। এবারই প্রথম এমন কীর্তি গড়লো তারা। সেমিফাইনালে ২৭ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। একই দিনে অন্য সেমিতে ভারতের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।
টস হেরে বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ের শুরুটা করেন তানজিম হাসান সাকিব। প্রথম ওভারে ৩ রান দেন তিনি। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদ দেন দুই রান। এই দুজনের করা প্রথম চার ওভারে আসে ২১ রান।

পঞ্চম ওভারে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সাফল্যও প্রায় এনে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার করা তৃতীয় বলে ইবরাহিম জাদরানের ক্যাচ ছেড়ে দেন তাওহীদ হৃদয়। শর্ট কাভারে দাঁড়িয়ে থাকা তার কাছে বল গিয়েছিল বেশ দ্রুত। হাতে জমিয়ে রাখতে পারেনননি হৃদয়।

পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ২৭ রান তুলতে পারেন দুই ওপেনার। এরপরও অবশ্য থামেননি তারা। ১০ ওভারে ৫৮ রান তুলে চায়ের বিরতিতে যায় আফগানিস্তান। ফেরার পরই অবশ্য তারা হারিয়ে ফেলে উইকেট। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে এনেই সফল হন শান্ত।

১৮ বলে ২৯ রান করে রিশাদের বলে তানজিম হাসান সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরত গেছেন ইবরাহিম জাদরানের। অনেকটুকু দৌড়ে এসে ক্যাচ নেন তানজিম। আগে থেকেই চাপে থাকা আফগানিস্তান খেই হারায় উইকেট হারানোর পর।

ইবরাহিম ফেরার পরের ওভারে এসে মেডেন দেন তাসকিন আহমেদ। রিশাদ নিজের তৃতীয় ওভারে এসে দুটি চার হজম করেন। তবে আরও একবার ম্যাচের মোড় ঘুরে এই লেগ স্পিনারের হাত ধরেই। অবশ্য গুরবাজের সঙ্গে গড়ে উঠা আজমতউল্লাহর জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ নেন লিটন দাস। শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। ১২ বলে ১০ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় আজমতউল্লাহকে। ১৭তম ওভার করতে এসে দুই উইকেট তুলে নেন রিশাদ। দুটিতেই ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার।

তার করা অনেক বাইরের বলে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে পৌঁছাতে পারেননি গুরবাজ। ৫৫ বলে ৪৩ রান করে আউট হন তিনি। তার করা চতুর্থ বলে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন সৌম্য। এবার ৩ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান গুলবাদিন নাইব।

পরের ওভারে এসে মোহাম্মদ নবীকেও আউট করেন তাসকিন। এই ওভারে টানা পাঁচটি ডট বল করে শেষটিতে ছক্কা হজম করেন তাসকিন। ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজ দেন এক রান। কিন্তু তানজিম সাকিবের করা শেষ ওভারে ১৫ রান নেন রশিদ খান। ইনিংসের শেষে বৃষ্টি এলেও সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

রান তাড়ায় নেমে সেমিতে উঠার সমীকরণ মেলানোর লড়াইয়ে নামে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই আসে ১৩ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে গিয়েই হারিয়ে ফেলে উইকেট। ৩ বলে শূন্য রানে নাভিন উল হকের বলে এলবিডব্লিউ হন তানজিদ হাসান তামিম। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি।

পরের ওভারে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে বাংলাদেশ। টানা দুই বলে আউট হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসান। ৫ বলে ৫ রান করে ডিপ মিডউইকেটে মোহাম্মদ নবীর হাতে ক্যাচ দেন শান্ত। নাভিন উল হকের পরের বলে তার হাতেই ক্যাচ দেন সাকিব আল হাসান। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেও সেটি করতে পারেননি নাভিন।

মাঝে বৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়। তবে বাংলাদেশের সেমির সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকে। সৌম্য সরকারের সঙ্গে লিটন দাসের জুটিও লম্বা হতে দেননি রশিদ খান। ১০ বলে ১০ রান করা সৌম্যকে বোল্ড করেন তিনি।

এরপরও উইকেটে এসে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাওহীদ হৃদয়। তারও ব্যাটে ঠিকঠাক টাইমিং হচ্ছিল না, তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ৯ বলে ১৪ রান করে হৃদয় আউট রশিদ খানের বলে বাউন্ডারির কাছে ক্যাচ দিয়ে।

তার আউটের পরই হুট করে বাংলাদেশের ইনেন্ট বদলে যায়। নূর আহমেদের ১০ম ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পাঁচটি ডট দেন, হাঁকান কেবল একটি বাউন্ডারি! এমনকি তার মধ্যে কতটা চেষ্টা ছিল, প্রশ্ন উঠতে পারে সেটি নিয়েও।

এরপরের ওভারে আসেন রশিদ খান। বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনার শেষ তো বটেই, ম্যাচ হারের শঙ্কাও ভর করে এই ওভারে। পঞ্চম বলে রিয়াদের ব্যাট ছুয়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ ইশহাকের হাতে যায়। আম্পায়ার আউট দেননি। পরে বদলি ইশহাকের কথায় রিভিউ নিয়ে সফল হয়ে যান রশিদ। পরের বলেই রিশাদ হয়ে যান বোল্ড।

বৃষ্টিতে এক ওভার কমে আস ম্যাচের দৈর্ঘ্য। একপ্রান্তে যখন উইকেট পড়ছে, তখন আরেকদিকে বাংলাদেশের জন্য ভরসা হয়ে থাকেন লিটন। তার দিকে তখন তাকিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়াও। কারণ বাংলাদেশ জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হতো তাদের।

কিন্তু লিটন আর স্ট্রাইকেই আসতে পারেননি। ১৮তম ওভারে তাসকিনকে বোল্ড করার পরের বলেই এলবিডব্লিউ হন মোস্তাফিজুর রহমান। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো আফগানিস্তানের ডাগ আউট। কারো চোখে দেখা মেলে জলেরও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d