বানভাসিদের পাশে সেই পায়েল ফাউন্ডেশন
নিজের চেয়েও প্রিয় ছোট ভাগ্নেকে হারিয়েছেন মর্মান্তিকভাবে। বিকৃত হয়ে যাওয়ায় শেষবারের মতো তাঁর মুখটাও ঠিকঠাকভাবে দেখতে পারেননি। ভাগ্নের খুনিদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন লড়াই। এই ব্যক্তিগত শোকের মধ্যেও ভাগ্নের নামে গড়ে তুলেছেন একটি ফাউন্ডেশন।
ছয় বছর আগে নির্মমভাবে হত্যার শিকার রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলের এই মামার নাম ফাহাদ চৌধুরী দিপু। তিনি পায়েল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। ২০১৮ সালের ২১ জুলাই প্রিয় ভাগ্নেকে হারানোর পর মানবসেবায় নিজেকে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন এই ব্যবসায়ী। করোনার সময় এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রায় ১০ লাখ টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এর পুরো টাকাটাই এসেছে পায়েলের মা-বাবা-ভাই আর ফাহাদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত আয় থেকে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফাহাদ চৌধুরী।
শনিবার (২৪ আগস্ট) মিরসরাইয়ে বন্যায় প্লাবিত গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ১ হাজার মানুষের হাতে খিঁচুড়ি-বিস্কুট ও শিশুদের জন্য ২ হাজার ৭০০ পিস কেক ও ৬০০ পিস ১ লিটার পানি বিতরণ করা হয়। ফাহাদ চৌধুরীর এই উদ্যোগে ছিলেন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, ফজলে এলাহি তালুকদার মিঠু, ফসিউল আলম রাশেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য হামিদুল হক রনি, আব্দুল হালিম হেলাল, মাহমুদ মিশু, মুরাদ হোসেন, কফিল উদ্দিন, তারেক লতিফি, জুয়েল চৌধুরী। সহায়তা দেওয়ার সময় বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দা সমাজসেবক আব্দুল মতিন ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক টিম লিডার আরিফ এই তাঁদের সহযোগিতা করেন।
২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান ও মহিউদ্দিনের সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন সাইদুর। দুই দিন পর ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জের ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা-পুলিশ। এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তাঁর সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেফতার করা হয়। সাইদুরের মামা গোলাম সরোয়ার্দী বাদী হয়ে চালক জামাল হোসেন, তাঁর সহকারী ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজার জনিকে আসামি করে গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় তিনজনের মৃত্যদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
জানতে চাইলে ফায়েল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফাহাদ চৌধুরী দিপু বলেন, ‘আমার সন্তানসম ভাগ্নেকে কিছু মানুষ অমানবিকভাবে মেরেছিল। আমরা তাই মানুষকে বার্তা দিতে চাই আপনারা কখনো অমানবিক হবেন না, ক্ষতি করবেন না। সেই কাজটা আমরা মানবিক কাজের মধ্যে দিয়েই করতে চাচ্ছি। সেজন্য পায়েল ফাউন্ডেশন আগের ধারাবাহিকতায় এবার বন্যার্ত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ালাম। এভাবেই সারাজীবন মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই।’