বিএনপিও জানে না কিভাবে অবরোধ সফল হবে
আগামীকাল থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। বিএনপি এবং জামায়াত যৌথভাবে এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ থেকে কতিপয় বিএনপির উৎশৃঙ্খল কর্মী ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করে। শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। বিএনপির উৎশৃঙ্খল কর্মীরা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, অডিট ভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়। এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সারা দেশ হতবাক হয়ে যায়। বিএনপির ওপর মানুষের নতুন করে আবার অনাস্থা শুরু হয়। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপি গতকাল সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু এই হরতালের দিন সকালবেলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেপ্তার হন। তার গ্রেপ্তারের পর বিএনপির আর কোনো নেতাকে দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে না।
গতকালের হরতালে বিএনপির কোনো নেতাই মাঠে ছিলেন না। আজও বিএনপির কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। শুধুমাত্র বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অনলাইনের মাধ্যমে কোন অজ্ঞাত স্থান থেকে নানা রকম বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন। কিন্তু বিএনপির এই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোনো নেতাকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতিতে কর্মীরা দিশেহারা। অনেকেই আত্মগোপনে আছেন অথবা পলাতক রয়েছেন। বিএনপি এই অবরোধ কর্মসূচি কিভাবে কিভাবে করবে তা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা নাই, কোনো গাইডলাইন নেই।
অবরোধ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে—এরকম প্রশ্ন করা হয়েছিল বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকে। তারা বলছেন যে অবরোধ কি হবে না হবে সে সম্পর্কে আমরা কোন কিছুই বলতে পারব না। অবরোধ কি হরতালের মতো হবে? এখানে কি গাড়ি ঘোড়া চলবে? নাকি গাড়ি ঘোড়া বন্ধ থাকবে? দোকানপাট সেখানে কি হবে? সাধারণত এই ধরণের কর্মসূচিতে সুনির্দিষ্ট একটি নির্দেশনা থাকে কিন্তু বিএনপির কর্মসূচি এতটাই অগোছালো যে এধরনের কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। এমনকি হাসপাতাল, গণমাধ্যমের গাড়ি ইত্যাদি অবরোধের আওতায় থাকবে কি থাকবে না সে সম্পর্কেও কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বিএনপির পক্ষ থেকে।
২৮ অক্টোবর গণমাধ্যমের ওপর ব্যাপক আক্রোশ দেখা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। আর সেই আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ আগামীকাল অবরোধেও ঘটবে কিনা সে নিয়েও অনেকের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। এধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যে ধরনের নির্দেশনা থাকে, বিভিন্ন নেতাকর্মীদের দায়িত্ব বন্টন থাকে, বিভিন্ন নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান গ্রহণ করেন, অবরোধের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপকল্প থাকে। কিন্তু এ ধরনের কোন কিছুই বিএনপির পক্ষ থেকে যাওয়া হয়নি। পাশাপাশি সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি উঠেছে যে অবরোধের পরে কি? যখন অবরোধ অচল হয়ে যাবে তখন কি করবে?
গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একধরনের হরতাল-অবরোধ এবং উৎশৃঙ্খল আন্দোলন বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ কাজ করতে চায়, তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ছুটে চলতে চায়। এই অবস্থায় হরতাল-অবরোধ ইত্যাদিকে তারা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে। গতকালের হরতালেও দেখা গেছে যে সাধারণ মানুষ অনেক কষ্ট করে হলেও তাদের কর্মস্থলে গেছেন কাজ করেছেন। এই সমস্ত হরতালে শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়। এখন অবরোধের মধ্যে আবার যে বিএনপি কি করবে তা নিয়েও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে। তবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত এবং সহজাত ভাবে অবরোধ কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালেও বিএনপি এই ধরনের আগুন সন্ত্রাস এবং জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছিল। সেই সময় নির্বাচনের পরে সাধারণ মানুষ বিএনপির ডাকা অবরোধ ভেঙে স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজপথে নেমে গিয়েছিল। ২০১৪ সালেও বিএনপির অনির্দিষ্টকালের অবরোধ এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্রত্যাহার করা হয়নি। কাজেই এ ধরনের অবরোধ বিএনপি কেন দিচ্ছি এবং এই ধরনের অবরোধ দিয়ে বিএনপি কেন খেলো হচ্ছে তা নিয়ে বিএনপির মধ্যেই এখন প্রশ্ন উঠেছে।