রাজনীতি

বিএনপিকে শর্তহীন নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ আওয়ামী লীগের

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের সঙ্গে বিএনপি সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে কূটনৈতিক মহল যোগাযোগ করছেন। তবে আওয়ামী লীগ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে বিএনপির সঙ্গে এখন তাদের কোনো রকম সংলাপ নয়। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে ঘটনা ঘটিয়েছে তারপর এই দলটির সঙ্গে সংলাপের প্রশ্নই উঠে না। বরং বিএনপির সঙ্গে যারা সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছে, সংলাপের কথা বলছে তাদেরকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বিএনপি যেন শর্তহীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এটিই তাদের একমাত্র পথ।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা স্বীকার করেছেন যে পশ্চিমা অন্তত দুটি দেশের কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগকে একটা সংলাপের আহ্বান জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে। তবে আওয়ামী লীগের ওই নেতা বিদেশি কূটনীতিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে তাণ্ডব করেছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। বিশেষ করে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুলকে যেভাবে পেটানো হয়েছে, পুলিশ হাসপাতালে যে প্রক্রিয়ায় হামলা করা হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল কখনো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলতে পারে না। এরকম সংলাপের কোনো রকম সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য উল্টো পরামর্শ দিয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে বিএনপি যদি সত্যি সত্যি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে তাহলে প্রথমে তাদেরকে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন যে সংলাপের আহ্বান জানাচ্ছে সে সংলাপে এখনো সুযোগ রয়েছে। সরকারের সঙ্গে সংলাপের চেয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। তারা বলছেন, যদি নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপ বিএনপি করে এবং নির্বাচনে শর্তহীনভাবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন হয়ত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগ একটা সংলাপের কথা বিবেচনা করতে পারে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে কিছু ছাড় দিতেও পারে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপি তাদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে না আসবে, যতক্ষণ তারা সন্ত্রাস এবং অগ্নিসংযোগের রাজনীতি বন্ধ না করবে ততক্ষণ আওয়ামী লীগ তাদের সাথে কোনরকম সংলাপ বা সমঝোতায় যাবে না।

আওয়ামী লীগ তার অবস্থান বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে সুস্পষ্ট করেছে। আওয়ামী লীগ বলেছে বিএনপি যতক্ষণ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিল, সহিংসতা পরিহার করে ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত সরকার তাদের সমস্ত কর্মসূচি করতে দিয়েছে। কোনো কাজে বাধা দেয় না। কিন্তু ২৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচির ব্যাপারে পুলিশ এবং সরকারের পক্ষ থেকে সম্মতি ছিল, সমর্থন ছিল। কিন্তু তারা যে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে তা কোনো সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না। এটি একটি রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না। এ কারণেই আওয়ামী লীগ মনে করছে যে বিএনপি এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে তার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে বিএনপির এখন একমাত্র উপায় হল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য শর্তহীন ঘোষণা দেওয়া। আর বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে আওয়ামী লীগ তার নিজস্ব পদ্ধতিতে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের পথে এগোবে। সে রকম নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার কোনো ক্ষমতা বিএনপির নেই বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d