বিএনপি এখন সন্ত্রাসী সংগঠন, আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না: তথ্যমন্ত্রী
তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি এখন চূড়ান্ত সন্ত্রাসী সংগঠনের রূপ ধারণ করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না- এমন মন্তব্য করলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু ৭ম খণ্ড’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে করে বিএনপির অবরোধ ঘোষণা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এতেই প্রমাণিত হয় বিএনপি নেতারা আসলে কতটা ভীতু। ২৮ অক্টোবর কর্মীরা যাওয়ার আগেই নেতারা পালিয়ে গেছেন। নেতারা পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীরাও পালিয়ে গেছেন। আমরা বিরোধী দলে ছিলাম, সারা জীবন বিরোধী দলের কর্মী ছিলাম। আমরা রক্তাক্ত হয়েছি, পালিয়ে যাইনি। বিএনপি নেতারা সামনে আসতেই ভয় পান, সেজন্য তারা ভার্চ্যুয়ালি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপি এখন আর রাজনৈতিক দলে নেই। বিএনপি এখন সন্ত্রাসী দল, সন্ত্রাসী সংগঠনে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। যারা রাষ্ট্রের বেদিমূলে আঘাত হানে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে যারা হামলা চালায়, অর্থাৎ বিচার ব্যবস্থার ওপর হামলা চালায়, যারা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়ে দেয়, যারা পুলিশ হত্যা করে, তারা কখনও রাজনৈতিক দল হতে পারে না।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি এখন কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তারা সন্ত্রাসী সংগঠনের চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। আওয়ামী লীগ যে কারো সঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে আলোচনা করতে পারে। যারা গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে বিশ্বাস করে, যারা দেশের সংবিধান মানে, আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে মানে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। তারেকের নেতৃত্বে বিএনপি এখন চূড়ান্ত সন্ত্রাসী সংগঠনের রূপ ধারণ করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই, রোববার তারা সারা দেশে হরতাল ডেকেছিল। হরতাল সফল করার জন্য পুরনো আগুন সন্ত্রাসের খেলায় ফিরে গেছে বিএনপি-জামায়াত। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে গাড়িচালকদের হত্যা করা হয়েছে। শনিবার রাতেও ডেমরায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়েছে, সেই আগুনে বাস ও বাসের হেলপার পুড়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছিলাম। ঢাকায় কমপক্ষে দেড়-দুই লাখ মানুষের সমাবেশ হয়েছে। এত উসকানির মধ্যেও আমাদের নেতাকর্মীরা কোনো উসকানিতে পা দেননি। তারা আমাদের মহিলা কর্মী থেকে শুরু করে অনেককে মারধর করেছেন। মহিলাদের কাপড় ধরেও টানাটানি করেছেন। দেড় কিলোমিটার দূরে এত তাণ্ডব চালালেন। আমাদের নেতাকর্মীরা কিন্তু সেখানে যাননি, আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, লালমনিরহাটে আমাদের নেতাকর্মীরা শান্তি মিছিল করছিলেন, সেখানে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন শ্রমিক লীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। মোহাম্মদপুরে বাসে আগুন দিতে গিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি কর্মী একটি ভবনে উঠেছিলেন, সেখান থেকে লাফ দিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে, বিএনপি বলে শহীদ হয়েছে। গাড়িতে আগুন দিতে গিয়ে ধাওয়া খেয়ে বিল্ডিংয়ে উঠেছিলেন, বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে মারা গেছেন। এক দুষ্কৃতকারী মারা গেছে, বিএনপির ভাষায় শহীদ হয়েছে।
বিএনপি স্পষ্টত সারা দেশে নৈরাজ্য ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তিন দিনের অবরোধ ডেকেছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তারা জানে, তাদের পক্ষে দেশে অবরোধ কার্যকর করা সম্ভব নয়। তারা চোরাগোপ্তা হামলা, নৈরাজ্য সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে অবরোধ ডেকেছে। আমরা জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে যাতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যারা মানুষের সহায়-সম্পত্তি, সরকারি সম্পত্তিতে আগুন দেবে, ধ্বংস করবে তারা চোর-ডাকাতের চেয়েও খারাপ। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধেও জনগণ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, গত শনিবারের সহিংসতার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিন্দা জানিয়েছে। আমরা মনে করি সহিংসতা বন্ধ করার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে এটিও বলা হয়েছে সহিংসতার ভিত্তিতে ভিসা নীতি নিয়েও তারা ভাববে। যারা হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে, পুলিশ হত্যা করেছে, জনগণের সম্পত্তি পুড়িয়েছে, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স জ্বালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি তো বলেছিল খালেদা জিয়াকে বিদেশ না নিলে তাকে রক্ষা করা যাবে না। এখন আমেরিকা থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল এবং তিনি আগের তুলনায় অনেক ভালো আছেন। এজন্য আমিও স্বস্তি প্রকাশ করছি। সরকারই মার্কিন চিকিৎসকদের আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাদের যে মতামত, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, এতেই প্রমাণিত হয় বিএনপি খালেদা জিয়াকে রাজনীতির গুটি বানিয়েছে এবং তার স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি করেছে।