বিকাশ অ্যাকাউন্ট অচল করে চবি শিক্ষকের সঙ্গে প্রতারণা
মোবাইল সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশ’র কর্মী সেজে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রতারণার শিকার শিক্ষক জাসিয়া মুজিব পড়শী বাদী হয়ে রোববার (১৯ নভেম্বর) নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তার বাসা নগরীর কোতোয়ালী থানার কাজির দেউড়িতে।
জাসিয়া মুজিব পড়শী জানান, শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তার ব্যক্তিগত নম্বরে ০১৬০৪ ৬৫৮২৮১ নম্বর থেকে কল আসে। কলদাতা ব্যক্তি নিজেকে বিকাশ প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে জানান, ভুলক্রমে তার নম্বরে একজন গ্রাহকের টাকা চলে গেছে। এজন্য বিকাশ অফিসে তিনি একটি অভিযোগ করেছেন। পড়শী একথা শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিন্তু এরপর থেকে তিনি নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে লগইন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এর কিছুক্ষণ পর ০১৮৭৯৫৪৪১৬২ নম্বর থেকে তার নম্বরে আরেকটি কল আসে। ট্রু কলার অ্যাপসে সেটি ‘বিকাশ সার্ভিস সেন্টার’ হিসেবে দেখানো হয়। কল রিসিভ করার পর তাকে জানানো হয়, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সচল করতে হলে তাকে কোড ও পিন নম্বর দিতে হবে।
‘আমার মোবাইলে কোড নম্বর আসে। সেটি দেয়ার পর একটি পিন নম্বর আসে। সেটিও তাদের দিই। এরপর আমাকে জানায়, নিজের অ্যাকাউন্টে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা ক্যাশইন করতে হবে। আমি টাকা নেই জানালে আমাকে কোনো দোকান থেকে টাকা ক্যাশইন করতে বলেন। অ্যাকাউন্ট সচল হওয়া মাত্র সেটা দোকানিকে ফেরত দেয়ার কথা বলেন।’
পড়শী কাজির দেউড়ি দুই নম্বর গলিতে গিয়ে সালাম এন্টারপ্রাইজ থেকে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা ক্যাশইন করেন এবং কলদাতাকে জানান। কিন্তু এরপরও অ্যাকাউন্টটি সচল হচ্ছে না জানিয়ে ০১৬১৬৮২৮৮২৬ এই নম্বরে আবার ২৪ হাজার ৫০০ টাকা ক্যাশইন করতে বলেন।
তিনি জানান, এভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্ট সচল করার আশায় তিনি ০১৬১৬ ৮২৮৮২৬ নম্বরে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা পাঠান। দুটি নম্বরে ৪৯ হাজার টাকা পাঠানোর পর দোকানির লিমিট শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও তাকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানোর জন্য বলে। তখন তিনি আগে পাঠানো টাকা ফেরত চান।
‘পড়শী বলেন, ‘এরপর দেখি যেসব নম্বর থেকে এতক্ষণ ফোন এসেছে সেগুলো বন্ধ। আমি আর যোগাযোগ করতে পারিনি। তখন বুঝতে পারলাম, এরা প্রতারক চক্র। আমি গতকাল (রোববার) বিকাশের হেল্পলাইনে কল করে আমার অ্যাকাউন্টটি সচল করি। তখন আমি জানতে পারি, আমার অ্যাকাউন্ট থেকে আগের প্রায় ১০ হাজার টাকাসহ মোট ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক বলেন, ‘আমরা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। যেসব নম্বর থেকে ফোন এসেছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সেগুলোর ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। এখন অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু টাকাগুলো ভাগ হয়ে রংপুর, কুষ্টিয়া এবং গাজীপুরে চলে গেছে। প্রতারক চক্রও সেখানকার। আমরা চেষ্টা করছি, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে টাকাগুলো উদ্ধারের জন্য।’