বিল জালিয়াতি ও চেক প্রতারণা, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিল চক্র
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ভুয়া বিলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে ৪ মাস আগে পরিকল্পনা করেছিল সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এর সঙ্গে ডিএফএ-স্টোর (ডিভিশনাল ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার) অফিসের সংশ্লিষ্টরাসহ বহিরাগত এক নারীও জড়িত ছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিএফএ স্টোরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রথমেই ‘অলিখিত চেক’র একটি কপি সংগ্রহ করেন। এরপর সেই চেক ইস্যু করতে রেলের সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এক নারীকে দিয়ে খোলা হয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ৩১ জানুয়ারি সেই চেকটির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয় ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গত এক সপ্তাহের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে তোলপাড় চলছে।
সূত্র জানায়, রেলওয়ের প্রতিটি বিল প্রসেস করার ক্ষেত্রে সিসিএস দপ্তর থেকে বাজেট অনুমোদন করে বিল পরিশোধের ফরোয়ার্ডিং পত্রসহ ডিএফএ-স্টোর শাখায় বিলটি পাঠানো হয়। সেই শাখায় বিল ম্যানুয়াল রেজিস্টারে এন্ট্রি করে রিসিভ করা হয়। এরপর বিলটি ফাইলে উঠে। একইসঙ্গে আইবাস++ সিস্টেমে টোকেন তৈরি করে বিলের এন্ট্রি দেওয়া হয়। পরে বিলসংক্রান্ত ফাইলের ওয়ার্ক অর্ডার কপি, চুক্তিপত্রের কপি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চালান কপি, দাবিকৃত বিলের কপি, আরনোট কপি এবং সিসিএসের ফরোয়ার্ডিং পত্রসহ ম্যানুয়ালি ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর কর্তন করে ক্যাশ অর্ডার সাত বা সিও সেভেন প্রস্তুত করে আইবাস++ সিস্টেমে বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়। ডিএফএ-স্টোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাব কর্মকর্তা চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে বিলসংক্রান্ত সব কাগজপত্র সংযুক্ত করে সিও সেভেনসহ পাশকৃত বিলের ফাইলটি বুকস অ্যান্ড বাজেট শাখায় চেক ইস্যুর জন্য পাঠিয়ে দেয়। সেখানে অনুমোদিত বিলসংক্রান্ত কাগজপত্র এবং সিও সেভেনের সঠিকতা যাচাই করে আইবাস সিস্টেমে চেকের অনুমোদন দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিসিএস দপ্তরের বিল পরিশোধের ফরোয়ার্ডিং পত্র ছাড়াই কথিত বিলটি প্রস্তুত করে সংঘবদ্ধ চক্র। দ্য কসমোপলিটন করপোরেশন নামে সরবরাহকারীর বিলের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চারটি বিলের চেক নম্বর যথাক্রমে ৩০৪-৭ পর্যন্ত (শেষ তিনটি নম্বর)। অথচ কথিত পঞ্চম চেকের শেষ তিনটি নম্বর ০৮৫। অর্থাৎ ৩০৪ নম্বর চেক ইস্যু করার আগেই ৮৫ নম্বর চেকটি সংগ্রহ করে রেখেছিল চক্রটি। এরপর চক্রটি চট্টগ্রামের বাইরের একটি সরবরাহ প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে। সেই অনুযায়ী নভেম্বরে কহিনুর আক্তার নামে এক নারীকে দিয়ে কসমোপলিটনের স্বত্বাধিকারী সাজিয়ে সীমান্ত ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলে তারা। সিসিএস দপ্তর থেকে কসমোপলিটনের চারটি বিলের কগজপত্র ডিএফএ-স্টোর শাখায় যাওয়ার পর একইসঙ্গে পঞ্চম বিলের একটি ভুয়া ফাইল তৈরি করা হয়। ধাপে ধাপে সংশ্লিষ্টরা কথিত চেকটিও অনুমোদনের জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
জানতে চাইলে দ্য কসমোপলিটন করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী নাবিল আহসান বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে চট্টগ্রামের ঠিকানায় কহিনুর আক্তার নামে এক নারী ওই ব্যাংকে অ্যাকাউন্টটি খুলেছেন। কিন্তু আমার অথরাইজেশন ছাড়া চেকটি কিভাবে হস্তান্তর করা হলো, এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এফএঅ্যান্ডসিএও সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ঘটনায় আমার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।