খেলা

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ফলাফল সাকিবের চোখে ‘খুব একটা খারাপ না’

ছয় ম্যাচের তিনটি জয়, তিনটিতে হার। সাফল্যের হার ৫০ শতাংশ। এভাবেই বিশ্লেষণ করলেন সাকিব আল হাসান। ফলাফলের দিক থেকে বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের পারফরম্যান্সকে খুব খারাপ মনে করেন না তিনি। সুপার এইটের দুই ম্যাচে স্রেফ আরেকটু লড়াই জমাতে পারলে বিশ্বকাপ অভিযান দলের জন্য সফল হতো বলেই মনে করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।

গ্রুপ পর্বে চার ম্যাচের তিনটিতে জিতে সুপার এইটে পা রাখে বাংলাদেশ। গ্রুপের আরেক ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও জয়টা একরকম মুঠোয় ছিল। কিন্তু শেষ দিকে খেই হারিয়ে ম্যাচ হেরে বসে তারা। তার পরও গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্সে অনেক আশার উপকরণ ছিল পরের ধাপের জন্য।

কিন্তু সুপার এইটে চূড়ান্ত হতাশ করে চলেছে দল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারার পর ভারতের বিপক্ষে শনিবার বলা যায় অসহায় আত্মসমর্পণই করেছে তারা।

পুরো টুর্নামেন্টে পেছন ফিরে তাকিয়ে তবু ইতিবাচক ছবিই দেখছেন সাকিব। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি আক্ষেপ করলেন সুপার এইটের দুই ম্যাচে লড়াই জমাতে না পারায়।

যদি ফলাফলের কথা বলেন, অবশ্যই আমি বলব যে, ফলাফলের দিক থেকে আমরা মোটামুটি একটা অবস্থানে আছি। ছয়টা ম্যাচ খেলেছি, তিনটা জিতেছি, তিনটা হেরেছি। ৫০ শতাংশ যদি ইয়ে ধরেন… সেদিক থেকে খুব একটা খারাপ না।

তবে আমি যেটা অনুভব করি, আমরা যখনই কোনো বড় দলের সঙ্গে যেভাবে লড়াই করেছি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে লড়াই করেছি, এই দুটি ম্যাচে যদি ওভাবে লড়াই করতে পারতাম, আমাদের জন্য ভালো ও সফল একটা বিশ্বকাপ হতো বলে আমার মনে হয়। সুপার এইটের দুটি ম্যাচেই আমরা যেভাবে প্রথম থেকে পিছিয়ে ছিলাম এবং ওই জায়গা থেকে আমাদের জন্য এটি বিব্রতকর।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক প্রশ্ন তো আছেই। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটির জন্ম হঢেছে টসের সময়ই। টস জিতে এ দিন ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শার্মা তাতে খুশিই হন, তারাও যে আগে ব্যাটিংই করতে চাইছিলেন!

আগে বোলিংয়ে নামার পর দুই প্রান্তেই স্পিনার দিয়ে আক্রমণ শুরু করে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারের মধ্যে চার ওভারই করেন স্পিনাররা। পাওয়ার প্লেতে একটি উইকেটের পতন যদিও হয় স্পিনেই, তবে ততক্ষণে উড়ন্ত সূচনা পেয়ে যায় ভারত।

ম্যাচ যত গড়ায়, শুরুর ওই সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে প্রশ্ন ততই জোরালো হতে থাকে। সাকিব নিজেও সংবাদ সম্মেলনে বুঝিয়ে দিলেন, টসের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত নন।

আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আমার মনে হয়… ওই একটা ম্যাচ, যেখানে ইংল্যান্ড ১৮০ তাড়া করে জিতল, ওটা ছাড়া আগে ব্যাট করাই ছিল বেশির ভাগ দলের ধারা এবং বেশ সফলও হয়ছে তারা। পরিসংখ্যানে তাকালে তাই, আগে ব্যাটিংই হয়তো আদর্শ হতো।

তবে অধিনায়ক ও কোচ হয়তো অন্যভাবে ভেবেছেন এবং আমরা মনে করেছি, একটা স্কোরের মধ্যে ওদেরকে আটকাতে পারব আমরা। সম্ভাব্য একটি স্কোর আমাদের ভাবনায় ছিল এবং সেটি তাড়ায় আমরা কীভাবে ব্যাট করব, এই ভাবনা ছিল। এজন্যই হয়তো আমরা আগে ব্যাট করেছি।

বাংলাদেশ দলে টসের সিদ্ধান্ত সাধারণত অধিনায়ক একা নেন না। কোচ ও অধিনায়কের বড় ভূমিকা থাকে সিদ্ধান্তে। কখনও কখনও অন্য অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সম্পৃক্ত করা হয় আলোচনায়। গোটা দলের উন্মুক্ত আলোচনাও মাঝেমধ্যে হয়।

সাকিব এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, কিছুদিন আগেও ছিলেন অধিনায়ক। তবে তার সঙ্গে এই ম্যাচের টসের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়নি বলেই জানালেন তিনি। ৩৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডের মতে, এসব সিদ্ধান্তের দায় কোচ-অধিনায়কের ওপরই বর্তায়।

বিষয়টা আসলে অভিজ্ঞতা বা সিনিয়র, এসবের বিষয় নয়। এখানে যখন দলের নেতা একজন থাকবে, অধিনায়ক থাকবে, সিদ্ধান্ত আসলে তার। যদি আমরা ভালো করতাম, তাহলে অধিনায়কের কৃতিত্ব যেত। খারাপ করলে অধিনায়ক-কোচের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন থাকত। এগুলি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার এবং খুবই যুক্তিযুক্ত।

খেলায় এগুলা হয়ই। যদি এমন হতো যে আমরা প্রথম দুই ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে ফেলেছি, তাহলে মনে হতো যে খুব ভালো সিদ্ধান্ত। এখন উইকেট পড়েনি, এখন মনে হচ্ছে যে এখানে আগে ব্যাট করলে ভালো হতো।

অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে পরাজয়ের পর বাংলাদেশের সেমি-ফাইনাল সম্ভাবনা টিকে আছে কেবল গাণিতিক হিসেবে। রোববার সকালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে সেই গাণিতিক সম্ভাবনাও শেষ। সাকিব অবশ্য ভারতের কাছে হারার পরই আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

সত্যি বলতে, আমার মনে হয় না আজকে হারার পর সেমি-ফাইনাল খেলার সুযোগ আমাদের আর আছে। তবে পরের ম্যাচ আমাদের জন্য সুযোগ টুর্নামেন্ট শেষ করার আগে একটি জয় আদায় করার। শেষটা ভালোভাবে করতে ভালো লাগবে আমাদের।

শেষ ম্যাচে আগামী মঙ্গলবার সকালে সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। সাকিবের আশা, এই দুই ম্যাচে হার থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগবে আফগানদের বিপক্ষে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হবে আমাদের, যারা খুব ভালো দল। ওদের বিপক্ষে জিততে হলে নিজেদের সেরাটাই খেলতে হবে আমাদের। এই দুই ম্যাচ আশা করি আমাদেরকে অনেক কিছু শেখাবে এবং সেই শিক্ষাগুলো আমরা বয়ে নিতে পারব পরের ম্যাচে, যেন ক্যারিবিয়া ছাড়ার আগে একটি জয় আমরা পেতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d