কক্সবাজারচট্টগ্রাম

বেড়েছে জেলিফিশ, দুই-আড়াই মাস ধরে সাগরে মাছের আকাল

সাগরে কোথাও জাল ফেলা যাচ্ছে না। জাল ফেললেই উঠে আসছে জেলিফিশ।

জেলিফিশের আধিক্য বেড়ে যাওয়ায় দুই থেকে আড়াই মাস ধরে মাছের আকাল চলছে। এ অবস্থায় জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেলে ও ট্রলার মালিকরা।

সমুদ্রবিজ্ঞানী ও গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি, পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, সামুদ্রিক কচ্ছপের বিচরণ ও সংখ্যা কমে যাওয়া এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে ‘জেলিফিশ ব্লুম’ বা উচ্চ প্রজনন হারের ঘটনা ঘটছে।

জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় প্রায় সাত হাজার মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। দুই-আড়াই মাস ধরে অধিকাংশ ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে হতাশ। অল্প-স্বল্প মাছ পড়লেও তাতে জ্বালানি খরচও উঠছে না।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. বদরুদ্দোজা বলেন, চলতি মাসে এক থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ১৫৬ টন ইলিশ, ১৩ টন রিটা, ৯ টন চান্দা ও ১৭৩ টন মিশ্রিত মাছ আহরণ হয়েছে।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ২৬৭ দশমিক ৮৮ টন ইলিশ ও অন্যান্য মাছসহ শুধু ৪৭১ টন মাছ আহরণ হয়েছে। জানুয়ারিতে আহরণ হয়েছিল ৪২৪ দশমিক ৫৩ মেট্রিক টন ইলিশসহ ৭১৯ টন মাছ।

শহরের বাহারছড়া বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, এমনিতেই ভালো মাছগুলো কক্সবাজারের বাইরে চলে যায়। তার ওপরে এখন সাগরে মাছ মিলছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তা কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। যে কারণে খুচরা বাজারে কেড়ে গেছে মাছের দাম।

জানা গেছে, দেশে প্রায় ৪৫ লাখ টন মাছের চাহিদার মধ্যে সাত লাখ টন মাছের জোগান আসে সাগর থেকে। চলতি মৌসুমে মাছ ধরা শেষ হচ্ছে ২০ মে। এরপর সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এই পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে চলতি মৌসুম সামুদ্রিক মাছের ঘাটতি দিয়েই শেষ হবে। জেলিফিশও খাওয়ার উপযোগী, আছে অর্থনৈতিক মূল্য

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে দুই বছর ধরে মরা জেলিফিশ ভেসে আসছে। কয়েকদিন ধরে সৈকতের নাজিরারটেক, ডায়াবেটিক, শৈবাল, লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী, দরিয়ানগর ও হিমছড়ি পয়েন্টসহ বিস্তৃত উপকূলজুড়ে ভেসে আসে মৃত জেলিফিশ। সাগরে জেলেদের জালে আটকা পড়ে জেলিফিশ মারা পড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেলিফিশ খাওয়ার তালিকায় থাকলেও বাংলাদেশে এখনো বাজার সৃষ্টি হয়নি।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) জেলিফিশ সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা ও বাজার সৃষ্টি নিয়ে ছয় মাস ধরে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৌমিত্র চৌধুরী।

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে ২২ প্রজাতির জেলিফিশ শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ খাওয়ার উপযোগী। এর মধ্যে জেলিফিশের উচ্চ প্রজননের বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।

সাগরে জেলিফিশ বেড়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে সামুদ্রিক কাছিমের বিচরণ কমে যাওয়া অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।

তিনি বলেন, জেলিফিশ কাছিমের প্রধান খাদ্য। কাছিম কমে গেলে জেলিফিশের আধিক্য স্বাভাবিক বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক সাগর-মহাসাগরে ‘জেলিফিশ ব্লুম’ বা উচ্চ প্রজনন জেলেদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে জেলেদের জালে মাছের পরিবর্তে হাজার হাজার জেলিফিশ আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। বাজারমূল্য না থাকায় জেলেরা এসব মৃত জেলিফিশ সাগরে ফেলে দেয়।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি, পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, উপকূলীয় উন্নয়ন এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণেও জেলিফিশ ব্লুমের জন্য দায়ী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d