বে-টার্মিনাল প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন-প্রধানমন্ত্রী
চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের যাত্রা শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।একইসঙ্গে বন্দরে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) উদ্বোধন করেছেন
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পিসিটি প্রাঙ্গণে। সেখানে বড় পর্দায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্প্রচার করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল উপস্থিত আছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মূল অংশ থেকে ভাটির দিকে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর মোহনায় ড্রাইডক ও বোটক্লাবের মাঝে ২৬ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। বহির্নোঙ্গরে আসা মাদার ভ্যাসেলকে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে পৌঁছাতে ১২ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে পৌঁছাতে অতিক্রম করতে হবে ৬ নটিক্যাল মাইল।
৫৮৪ মিটার লম্বা এ টার্মিনালে তিনটি জেটি আছে। তিনটিতেই একযোগে জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে। দুটিতে আমদানি-রফতানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার জাহাজ এবং ২০৪ মিটার লম্বা অন্য ডলফিন জেটিতে জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করেছে। কিন্তু পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশের সুযোগ পাবে।
নতুন টার্মিনালটি বন্দর কর্তৃপক্ষ রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে সৌদি আরবের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার শেষ প্রান্তে সিইপিজেডের পেছনে সাগরপাড় থেকে সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অদূরে রাসমনিঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় ৯০০ একর ভূমিতে বে-টার্মিনাল প্রকল্পও আলোর মুখ দেখছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল জানান, বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হয়েছে। দেশি-বিদেশি পরামর্শক এবং বিদেশি বিভিন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ডিপিপি ও টেন্ডার কার্যক্রম শেষে আগামী বছরের মে-জুনে এর নির্মাণকাজ শুরু হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বে-টার্মিনালে প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি এক হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং একটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য তিন দশমিক ৫৫ কিলোমিটার। মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি। বাকি দুটি টার্মিনাল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ব্যবস্থায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটরদের অর্থায়নে নির্মাণ ও পরিচালনা করা হবে। বে-টার্মিনালে মোট ১৩টি জেটি থাকবে। বে-টার্মিনালে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি সুবিধা থাকবে। প্রকল্পের পূর্ব দিকে রয়েছে পোর্ট অ্যাকসেস রোড ও রেলপথ।
বে টার্মিনাল প্রকল্পটি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফটের ছয় হাজার কনটেইনার বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নোঙ্গর করা সম্ভব হবে। বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামোতে জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮০০ একক ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে। এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ে। কিন্তু বে টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ ভিড়তে পারবে।
সূত্রমতে, মাস্টারপ্ল্যানে বে-টার্মিনাল তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বিনিময়ে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হবে, এমন আশা মিলেছে। ১৪ মিটারের বেশি প্রাকৃতিক গভীরতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এই বে টার্মিনাল নিয়ে। প্রস্তাবিত এই বন্দরে বিনিয়োগ করবে সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি এবং দুবাইয়ের ডিপি ওয়াল্র্ড। গভীরতা রক্ষায় ব্রেক ওয়াটার তৈরির প্রকল্পে ৫০ মিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক।
চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী, এক হাজার ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি জেটিতে অংশীদার হিসেবে থাকছে দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড ও সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি। চট্টগ্রাম বন্দর এক হাজার ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের মালটিপারপাস জেটি নির্মাণ করবে। দেশে জ্বালানি তেলের পাশাপাশি এলপিজি ও এলএনজির মজুত সক্ষমতা আরও দুই মাস বাড়ানোর টার্গেট নিয়ে বে-টার্মিনালে লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল এবং ডিপো স্থাপনের প্রস্তাবও পেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন শ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালের চতুর্থ জেটি হিসেবে এই লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।