জাতীয়

ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় পিটিয়ে বাংলাদেশির হাত ভেঙে দিল বিএসএফ

কাজের সন্ধানে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় কিরণ (৪৫) নামে বাংলাদেশি এক হিজরার হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের বিরুদ্ধে।

সোমবার (৮ জুলাই) সকালে আহত কিরণকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ উদ্ধার করে প্রথমে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন।
জানা গেছে, আহত কিরণের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় এলাকায়।

জানা গেছে, কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ১১ জন হিজরার একটি দলের হয়ে কিরণ ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে শনিবার (৬ জুলাই) পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় আসেন। সেখানে একটি ঘরে অবস্থান নিয়ে রোববার (৭ জুলাই) রাতে পাচারকারীর মাধ্যমে বাংলাবান্ধার ৭৩২ নম্বর পিলার এলাকা দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন তারা। টের পেয়ে বিএসএফ ধাওয়া করলে অন্যরা পালাতে পারলেও বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন কিরণ। এসময় তাকে টেনে হিঁচড়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে রাইফেল ও লাঠি নিয়ে বেদম মারধর করে বিএসএফ। এতে তার বাম হাত ভেঙে যায়। এ অবস্থায় কিরণকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ফেলে দেয় বিএসএফ। পরে সকাল ১০টা নাগাদ স্থানীয়রা তাকে সীমান্তে পড়ে থাকতে দেখে বাংলাবান্ধা বিওপি ও উপজেলা প্রশাসনকে খবর দেন। বিজিবির মাধ্যমে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বির নির্দেশনায় উপজেলা সমাজসেবা অফিস তাকে সেখান থেকে পঞ্চগড়ে ও পরে চিকিৎসকের পরামর্শে রংপুর মেডিকেলে নেয়।

আহত কিরণ অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, ভারতে নাকি কাজের সুযোগ বেশি, রোজগারও বেশি। এজন্য ১০ জনের সঙ্গে আমিও ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। দালালদের ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। মধ্যরাতে যখন তারা আমাদের সীমান্তে নিয়ে দৌড় দিতে বলে, ওরা ১০ জন দৌড়ে পালাতে পারলেও আমি পড়ে যাই। পরে আমাকে ধরে তিন ঘণ্টা মারধর করে বিএসএফ সীমান্তে ফেলে যায়। হাত ভেঙে যাওয়ায় আমি উঠতে পারছিলাম না। সাহায্য চেয়ে চিৎকার করেছি, কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে বিজিবি সদস্যরা আমাকে উদ্ধার করে। আমি বিএসএফকে বার বার বলেছি, আমার হাত ভেঙে দিয়েন না, আমার সঙ্গে এমনটা না করে আমাকে মেরে ফেলেন। কিন্তু তারা আমার কোনো কথা শোনেনি।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রহিমুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ওই ব্যক্তিতে তেঁতুলিয়া থেকে এখানে রেফার করা হয়। তার হাত ও মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। তার হাতে ফ্র্যাকচার হতে পারে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুরে রেফার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, ওই ব্যক্তি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। বিজিবি বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। অবৈধভাবে সীমানা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। আমরা এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। একই সঙ্গে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d