খেলা

ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ৬ রোমাঞ্চকর লড়াই

এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে অপরাজিত থাকা ভারত ও পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।টুর্নামেন্টের সফলতম দল ও এবারের আসরের সবচেয়ে ধারাবাহিক দলের শিরোপানির্ধারণী লড়াইটি হবে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মাঠ আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। ১৯ নভেম্বর এই লড়াইয়ের আগে বার্তা সংস্থা এএফপি দুই পাওয়ার হাউসের অবিস্মরণীয় ছয় ম্যাচ বাছাই করেছে।

টেন্ডুলকারের মরুঝড়: ২২ এপ্রিল, ১৯৯৮- শারজায় ত্রিদেশীয় কোকাকোলা কাপের লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়ার তোলে ৭ উইকেটে ২৮৪ রান। যে রান ভারত তাড়া করতে নামলে মাঝপথে বালুঝড় হানা দেয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ম্যাচ আধঘণ্টার মতো বন্ধও থাকে। এরপর খেলা শুরু হলে ভারতের জয়ের জন্য পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৭৬ রান, আর ফাইনালে ওঠার জন্য ২৩৫ রান। ভারত শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি, তবে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে ফাইনালে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় রান ঠিকই তুলে নিয়েছিল। আর তাতে সিংহভাগ অবদান ছিল শচীন টেন্ডুলকারের।

ভারতীয় কিংবদন্তি সেদিন ডেমিয়েন ফ্লেমিং, মাইকেল ক্যাসপ্রোউইচ ও শেন ওয়ার্নদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছিলেন। দলকে ২৩৫ রান পার করে আউট হওয়ার আগে ১৩১ বলে তোলেন ১৪৩ রান। অনেকের চোখেই এটি ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। মরুভূমির দেশে বালুঝড়ের দিনে খেলা টেন্ডুলকারের এই ইনিংসকে ‘মরুঝড়’ও বলা হয়।

পন্টিংয়ের শাষণ: ২৩ মার্চ, ২০০৩- জোহানেসবার্গের ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপের ফাইনাল। দিনের শুরুতে টস জেতেন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। তবে ব্যাট হাতে ম্যাচের আসল নায়ক হয়ে ওঠেন টসে হারা অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিং। ম্যাথু হেইডেন ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের উদ্বোধনী জুটি ১৪ ওভারের মধ্যে ১০৫ রান তুলে দিলে অস্ট্রেলিয়াকে সাড়ে তিন শর ওপারে নিয়ে যান পন্টিং।

দ্বিতীয় উইকেট ডেমিয়েন মার্টিনকে (৮৮*) সঙ্গী করে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ২৩৪ রানের জুটি। অস্ট্রেলিয়ার ২ উইকেটে ৩৫৯ রানের মধ্যে ১৪০ রানই পন্টিংয়ের। ১২১ বল খেলা ইনিংসটিতে ছিল ৪টি চার ও ৮টি ছয়। রান তাড়ায় বড় সংগ্রহের পেছনে ছুটতে গিয়ে ৩৯.২ ওভারে ২৩৪ রানে থেমে যায় ভারতের ইনিংস।

এত কাছে তবু দূরে: ৫ নভেম্বর, ২০০৯  হায়দরাবাদে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম উইকেটে ১৪৫ রান এনে দেন শেন ওয়াটসন–শন মার্শ। ওয়াটসন ৯৩ রান করে ফিরলেও মার্শ পৌঁছান তিন অঙ্কে (১১২)। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ৩৫০ রানের পুঁজি গড়ে অস্ট্রেলিয়া। রান তাড়ায় শচীন টেন্ডুলকার একাই খেলেন ১৭৫ রানের ইনিংস। ১৪১ বলের ইনিংসটিতে ১৯টি চারের সঙ্গে ছিল ৪টি ছয়।

তবে টেন্ডুলকার যতটা উজ্জ্বল ছিলেন, ততটাই নিরুত্তাপ ছিলেন ভারতের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান। সুরেশ রায়নার ৫৯ ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান পঞ্চাশের ঘরেই যেতে পারেননি। ১১ জনের মধ্যে ৭ ব্যাটসম্যান এক অঙ্কে আউট হওয়ার ম্যাচটিতে ভারত হারে মাত্র ৩ রানে, যদিও বল বাকি ছিল ২টি। ম্যাচের পর টেন্ডুলকারের ইনিংসটির প্রশংসা করে রিকি পন্টিং বলেছিলেন, ‘অন্যতম সেরা একটি ম্যাচ এবং শচীনের এযাবৎকালের অন্যতম সেরা ইনিংস।’

নকআউট পাঞ্চ: ২৪ মার্চ, ২০১১-  রিকি পন্টিংয়ের ১০৪ রানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া তুলেছিল ৬ উইকেটে ২৬০ রান। ম্যাচটা বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল হওয়ায় এই রানই মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের জন্য বড় লক্ষ্য হয়ে ওঠে। শচীন টেন্ডুলকার ৫৩ ও গৌতম গম্ভীর ৫০ রান করে আউট হয়ে গেলে ভারতকে ভর করতে হয় যুবরাজ সিংয়ের ব্যাটে। শেষ পর্যন্ত ১৪ বল বাকি থাকতে যুবরাজের অপরাজিত ৫৭ রানে ৫ উইকেটে জেতে ভারত। পরে সেমিফাইনালে পাকিস্তান এবং ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ট্রফি জেতে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। ভারত–অস্ট্রেলিয়ার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি হয়েছিল আহমেদাবাদের সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়ামে, সংস্কারের পর যার নাম এখন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম।

ব্যাটিং–রাজত্ব: ১৬ অক্টোবর, ২০১৩-  জয়পুরের স্বামী মানসিংহ স্টেডিয়ামে হওয়া ম্যাচটি ছিল বিরাট কোহলির, মাত্র ৫২ বলে তুলেছিলেন ১০০ রান। সে দিন অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেটে ৩৫৯ রান তাড়া করতে নেমে ভারতের সর্বোচ্চ ইনিংসটি অবশ্য কোহলির ছিল না। শিখর ধাওয়ানের (৯৫) সঙ্গে ১৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সঙ্গ দেওয়া রোহিত শর্মা খেলেন ১২৩ বলে ১৪১ রানের ইনিংস। তবে ৮ চার ৭ ছয়ে ঝোড়ো শতক তুলে কোহলিই নিজের দিকে আলো কেড়ে নেন। ভারত জেতে ৯ উইকেটে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৯২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা জর্জ বেইলি ম্যাচ শেষে ভারতের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছিলেন ‘দুর্দান্ত ব্যাটিং’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d