চট্টগ্রাম

ভুয়া বিলে ৯৭ লাখ টাকা জালিয়াতি, সাত কর্মকর্তা অধরা

ভুয়া বিলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল থেকে ৯৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে রেলের সাত কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেও তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিল জালিয়াতির ঘটনায় রেলওয়ের হিসাব কর্মকর্তা মামুন হোসেন, হিসাবরক্ষক শিমুল বেগম ও অডিটর পবন কুমার পালিতের আইবাস আইডি, পাসওয়ার্ড ও ওটিপি ব্যবহার হয়। তাদের ওটিপি ব্যবহার করে বিলটি পাস করানো হয়। তদন্ত কমিটির কাছে তারা দাবি করেন, তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। তবে তাদের আইডি ব্যবহারের সময় তিনজনের মোবাইল ফোনে আসা ওটিপি অন্য কেউ কীভাবে জানলেন ও ব্যবহার করলেন, প্রতিবেদনে তার ব্যাখ্যা নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভুয়া বিলটি পাস করাতে স্টোর এবং বাজেট-বিল শাখায় টোকেন ও বিল এন্ট্রি এবং চেক লেখা, স্বাক্ষরসহ আট ধাপে জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটেছে।

তবে রেলওয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এ ঘটনার মূল হোতা রেলওয়ের অস্থায়ী কর্মচারী অফিস সহায়ক হাবিবুল্লা খান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কসমোপলিটন করপোরেশনের কথিত চট্টগ্রাম এরিয়া সেলস অফিসার সোহাগ আলী।

রেলওয়েকে সরঞ্জাম সরবরাহের কথা বলে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এক চেকে ৯৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। পরদিন সীমান্ত ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে পুরো টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনো সরঞ্জামই সরবরাহ হয়নি। যেসব বিল দাখিল হয়, সেগুলো ভুয়া।

অভিযোগ উঠেছে, রেলওয়ের সাত কর্মকর্তার হাত দিয়ে বিলগুলো পাস এবং চেক বিতরণ হলেও শুধু কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বাঁচাতে ফৌজদারি মামলার পরিবর্তে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করেছে রেলওয়ের তদন্ত কমিটি।

গত ১১ মার্চ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অস্থায়ী কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা ও সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মতামত দেন রেলওয়ের আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম। আইন কর্মকর্তার মতামত পেয়ে ১৪ মার্চ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। ২৯ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন রেলওয়ের দপ্তরে জমা হয়।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রামের ডিএফএ জয়শ্রী মজুমদার রশ্মি বলেন, কর্তব্যে অবহেলা ও সরকারি অর্থ ক্ষতিসাধনের অপরাধ সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া অস্থায়ী কর্মচারী হাবিবুল্লা খান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কসমোপলিটনের ব্যাংক হিসাব পরিচালনাকারী, অর্থাৎ অর্থ তছরুপকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

রেলওয়ের হিসাব কর্মকর্তা সোহাগ মীর বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অর্থ লোপাটের মূল হোতা অস্থায়ী কর্মচারী হাবিবুল্লাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম আদালতে ফৌজদারি মামলা হয়। তবে অভিযুক্ত সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নির্ধারণের জন্য আরেকটি কমিটি গঠন হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তাদের আইবাস আইডি, পাসওয়ার্ড জালিয়াতি সম্ভব হলেও ওটিপি তাদের নিজ নিজ মোবাইল ফোনে যায়। সেটি কীভাবে জালিয়াতি হয়েছে, তা এখনও বোধগম্য নয়।’

তবে অপরাধীদের লঘুদণ্ড দিয়ে বাঁচিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কসমোপলিটন করপোরেশনের কর্ণধার নাবিল আহসান বলেন, ‘সীমান্ত ব্যাংকে আমার প্রতিষ্ঠানের কোনো হিসাব নেই। জালিয়াত চক্র আমার প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে সীমান্ত ব্যাংককে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’ অস্থায়ী কর্মচারী হাবিবুল্লা খানকে একাধিকবার ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d