ভোগান্তিতে চট্টগ্রামের ৫ লাখ প্রবাসী
শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক তিনটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট গুটিয়ে নেওয়ার পর চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চট্টগ্রামের প্রায় পাঁচ লাখ প্রবাসী। বর্তমানে চট্টগ্রামভিত্তিক যাত্রীদের ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে নিরবচ্ছিন্ন হচ্ছে না ভ্রমণ, পাশাপাশি বাড়তি সময় লাগছে, খরচও বেশি হচ্ছে। উল্টো পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও গত ৮ মার্চ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট গুটিয়ে নেয় ওমানের জাতীয় বিমান সংস্থা ওমান এয়ার। এর আগে জানুয়ারিতে বন্ধ হয়ে যায় কুয়েতভিত্তিক জাজিরা এয়ারলাইন্স।
২০০৭ সালে চট্টগ্রাম-মাস্কট রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর কার্যক্রম শুরু করে ওমান এয়ার। যার ফলে মধ্যপাচ্যের দেশ ওমানে অবস্থানরত চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রবাসীদের যাতায়াত সুবিধাও অনেকটা বৃদ্ধি পায়। শুরুর দিকে সপ্তাহে পাঁচদিন ফ্লাইট পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে প্রতিদিনই ফ্লাইট চালু করে এয়ারলাইন্সটি। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পরিচালিত হওয়া ওমান এয়ারের বেশিরভাগ যাত্রী জেদ্দা ও মধ্যপ্রাচ্যগামী। এতদিন ওমান এয়ারে করে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ওমানের মাস্কট হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারতেন যাত্রীরা।
এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বন্ধ হয়ে যায় কুয়েতভিত্তিক জাজিরা এয়ারলাইন্স। এটিও চট্টগ্রাম থেকে কুয়েত সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করতো। এর আগে বন্ধ হয়ে যায় কুয়েত এয়ারওয়েজও। তাতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের যাত্রীরা। কারণ আগে তারা বন্ধ হয়ে যাওয়া বিমানে ওমান-চট্টগ্রাম ও কুয়েত-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইটে যাওয়া-আসা করতেন। এখন তাদের ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে ফিরতে হচ্ছে। তাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে প্রচুর সময় এবং আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। অথচ সরাসরি ফ্লাইট চালু থাকলে তাদের একদিকে সময় বাঁচতো, অন্যদিকে ভোগান্তিও কম হতো।
এছাড়া ফ্লাইট বন্ধের কারণে আলোচ্য দেশগুলোতে বিমান ভাড়াও তুলনামূলক বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ফ্লাইট বন্ধে প্রভাব পড়েছে ওমরার টিকিটেও। চট্টগ্রামের অনেক ওমরাযাত্রী এসব বিমান ব্যবহার করতেন। কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলোর ওমরা টিকিটের দাম বৃদ্ধি করে ফেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাহ আমানত দিয়ে একসময় বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করেতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- থাই এয়ার, কুয়েত এয়ার, ফুকেট এয়ার, রাস আল খাইমা (আরএকে) এয়ার, সিল্ক এয়ার, ভারতভিত্তিক স্পাইসজেট বিমান, ওমান এয়ার, কুয়েতভিত্তিক এয়ারলাইন্স জাজিরা এয়ারওয়েজ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যায় এসব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। বর্তমানে এ বিমানবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা, এয়ার এরাবিয়া, সালাম এয়ার ও ফ্লাই দুবাই।
চট্টগ্রামের প্রবাসীদের দুর্ভোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সিআইপি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামের সিংহভাগ প্রবাসীর অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে। যারা চট্টগ্রাম থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু এভাবে এয়ারলাইন্সগুলোর ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি চরম দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের রুটের বিমান টিকিটের মূল্যও অনেক বেড়ে গেছে।
হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, শাহ আমানতে একের পর এক বিমান সংস্থার সেবা বন্ধের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এতদিন বাংলাদেশ বিমানসহ পাঁচটি এয়ালাইন্স ওমরাযাত্রী পরিবহন করতো। কিন্তু জাজিরা এয়ালাইন্স ও ওমান এয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওমরাযাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। অনেকে টিকিট কেটে ঢাকা থেকে ওমরায় যাচ্ছেন।