ধর্ম

মসজিদ গিয়ে কিছু আদব-শিষ্টাচার

দুনিয়ায় আল্লাহতায়ালার প্রিয়তম স্থান হলো মসজিদ। যেখানে মুমিন বান্দারা নামাজ আদায় করেন, মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করেন, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত এবং আরও অন্য ইবাদত করেন।

প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া জরুরি। এটা ইমানের দাবিও বটে। মসজিদে গিয়ে মসজিদের আদব-শিষ্টাচার মেনে চলাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মসজিদে পালনীয় গুরুত্বপূর্ণ এমনই কিছু শিষ্টাচার হলো-

ডান পায়ে প্রবেশ ও বাম পায়ে বের হওয়া
মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা আগে রেখে প্রবেশ করা এবং বের হওয়ার সময় বাম পা আগে রেখে বের হওয়া। কারণ সাহাবি হজরত ইবনে ওমর (রা.) এরূপ করতেন এবং নবী করিম (সা.)-এর সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পারতপক্ষে সব কাজ ডানদিক থেকে করা পছন্দ করতেন। ‘ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

দরুদ ও দোয়া পড়া
প্রবেশকালে মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া। মসজিদের প্রবেশের দোয়া হলো-

‘বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাফ তাহলি আব ওয়াবা রাহমাতিক। ’
অর্থ ‘আল্লাহর নামে (প্রবেশ করছি), দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী (সা.)-এর প্রতি। হে আল্লাহ! আমার জন্য তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও। ’

অনুরূপ মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ও দোয়া পড়া। মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া হলো-
‘বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা মিন ফাজলিক। ’

অর্থ ‘আল্লাহর নামে বের হচ্ছি, দরুদ ও সালাম হোক নবী (সা.)-এর প্রতি, হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। ’ –সহিহ মুসলিম

মসজিদে যেতে তাড়াহুড়ো না করা
মসজিদে জামাত ধরতে গিয়ে অনেকেই তাড়াহুড়ো করেন। এটা ঠিক নয়। ধীরস্থিরভাবে মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু কাতাদা (রা.) বলেন, একদা আমরা হজরত নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করছিলাম, এমন সময় শোরগোল শোনা গেল। নামাজ শেষে নবী (সা.) বললেন, (তোমাদের কী হয়েছে) তারা বলল, নামাজের জন্য তাড়াহুড়ো করছিলাম। নবী (সা.) বলেন, এমন করো না; যখন নামাজে আসবে, তখন শান্তভাবে আস; যা পাবে তা পড়ে নেবে, আর যা ছুটে যাবে তা পূরণ করে নেবে। ’ –সহিহ বোখারি

তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা
মসজিদে প্রবেশের পর দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ আদায় করার আগে না বসা। এ বিষয়ে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন না বসে যতক্ষণ দুই রাকাত নামাজ না পড়ে। ‘ –সহিহ বোখারি

সুতরা স্থাপন করা
একা একা নামাজ আদায়কালে সামনে কিছু না থাকলে আড়াল তথা সুতরা নেয়া। (সুতরাং এমন বস্তুকে বলা হয়, যা নামাজি তার সম্মুখে রাখে, যেন তার সামনে দিয়ে কেউ না যায়)। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো কিছুর সামনে নামাজ পড়ে, যা লোকদের আড় করে দেয়, অতঃপর কেউ যখন (নামাজি ও আড়কারী বস্তুর) মাঝ দিয়ে যেতে চায়, তখন সে যেন তাকে বাধা দেয়, যদি সে না মানে, তাহলে সে যেন তার সঙ্গে লড়াই করে; কারণ সে শয়তান। ‘ –সহিহ বোখারি

আজানের পর মসজিদ থেকে বের না হওয়া
মসজিদে আজান হওয়ার পর কোনো সঙ্গত কারণ ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া নিষেধ। হজরত আবু শাশা (রহ.) বলেন, আমরা সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদে বসেছিলাম, অতঃপর মুয়াজ্জিন আজান দিল। তারপর এক ব্যক্তি উঠে বেরিয়ে যেতে লাগল। অতঃপর হজরত আবু হুরায়রা (রা.) তার দিকে চেয়ে থাকলেন, যতক্ষণে সে মসজিদ থেকে বের না হলো। তারপর তিনি বললেন, ‘এ ব্যক্তি আবুল কাসিম [নবী (সা.)]-এর অমান্য করল। ‘ –সহিহ মুসলিম

মুখের দুর্গন্ধ দূর করা
মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন, বিড়ি, তামাক তথা দুর্গন্ধ জাতীয় কিছু না খাওয়া। মুখে দুর্গন্ধ থাকলে তা দূর করে মসজিদে যেতে হবে। এজন্যই নামাজের আগে মেসওয়াকের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ খবিশ (মন্দ) চারা গাছের কিছু খেল, সে যেন আমাদের মসজিদের কাছে না আসে। কারণ ফেরেশতারা কষ্ট পান তা দ্বারা, যা দ্বারা আদম সন্তান কষ্ট পায়। ‘ -আল জামে ৬০৯১

মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করা
মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মসজিদের জিনিসপত্রের হেফাজত করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার কাছে আমার উম্মতের নেক কাজ এবং গোনাহর কাজ পেশ করা হয়। আমি তাদের সৎ আমলের মধ্যে পেলাম যা রাস্তা থেকে সরানো কষ্টদায়ক বস্তু। আর তাদের পাপ আমলে পেলাম নাকের আবর্জনা, যা দেখেও মসজিদ থেকে পরিষ্কার করা হয় না। ‘ –সহিহ মুসলিম

মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় না করা
এমন কাজ না করা উচিত, যা মসজিদের আদব বহির্ভূত। যেমন, ক্রয়-বিক্রয় করা, হারানো বস্তু খোঁজা এবং এরূপ আরও অন্য কিছু। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যদি তোমরা কাউকে মসজিদে কোনো কিছু বিক্রি কিংবা খরিদ করতে দেখ, তাহলে বল, আল্লাহ যেন তোমার ব্যবসায় লাভ না দেন। আর যদি কাউকে সেখানে হারানো বস্তু খুঁজতে দেখ, তাহলে বল, আল্লাহ যেন তোমাকে তা ফিরিয়ে না দেন। ‘ -তারগিব ও তারহিব ২৯১

মসজিদে শোরগোল না করা
মসজিদে খেল-তামাশা, অনর্থক দুনিয়াবি কথাবার্তা এবং উঁচু শব্দে এমনভাবে কোরআন তেলাওয়াত না করা, যার কারণে অন্য নামাজি, জিকিরকারী এবং মসজিদে দ্বীনের শিক্ষা প্রদানকারীদের কষ্ট হয়। সাহাবি হজরত সায়িব বিন ইয়াজিদ (রা.) বলেন, ‘একদা আমি মসজিদে ছিলাম, অতঃপর এক ব্যক্তি আমাকে নাড়া দেয়, তাকিয়ে দেখি, তিনি ছিলেন ওমর বিন খাত্তাব। তিনি আমাকে বললেন, যাও ওই দুই ব্যক্তিকে আমার কাছে নিয়ে আস, আমি তাদের নিয়ে এলাম। তিনি তাদের বললেন, তোমরা কোথাকার তারা বলল, তায়েফবাসী। তখন তিনি বললেন, যদি তোমরা এ শহরবাসী হতে তো তোমাদের দুইজনকে শাস্তি দিতাম। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মসজিদে তোমরা উঁচু আওয়াজে কথা বলছ!’ –সহিহ বোখারি

অন্য এক হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সতর্ক! তোমরা প্রত্যেকে তার প্রভুর সঙ্গে সংগোপনে আলাপকারী (মোনাজাতকারী), তাই যেন কেউ অন্য কাউকে কষ্ট না দেয় আর না তেলাওয়াতকালে একে অপরের ওপর আওয়াজ উঁচু করে। ‘ -নাসাঈ

নামাজে কাতার সোজা করা
নামাজের সময় মসজিদে লাইন সোজা করা এবং লাইনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। নবী (সা.) স্বয়ং লাইন সোজা করতেন এবং বলতেন, ‘বরাবর হয়ে যাও, ভিন্ন ভিন্ন হইও না; নচেৎ আল্লাহ তোমাদের অন্তরকে ভিন্ন ভিন্ন করে দেবেন, বড় ও জ্ঞানীরা যেন আমার কাছে থাকে। ‘ (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা লাইনগুলো সোজা করে নেবে; কারণ লাইন সোজা হওয়া পূর্ণাঙ্গ নামাজের পরিচয়। ‘ –সহিহ মুসলিম

মসজিদে ভিক্ষা না করা
মসজিদে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে দোয়া-প্রার্থনা না করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে ডেক না। ‘ -সূরা জিন ১৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d