মসজিদ-মাদ্রাসা-মাজারে হামলার বিচারসহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ৯ দাবি
রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদ্যাপন করা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার করাসহ ৯ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতে লিয়াজোঁ কমিটি।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয় উপাধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন- শান্তি, সহমর্মিতা এবং মানবতার মূর্ত প্রতীক প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (দ.) এর শুভাগমনের দিনে যথাযোগ্যে মর্যাদায় জাতীয়ভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ঈদ- এ- মিলাদুন্নবী (দ.) উদ্যাপনের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার, ধর্ম-বর্ণ, সকল নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান, দেশের প্রত্যেক মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।
আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়কে ম্লান করতে অনেক অশুভ পাঁয়তারা আমরা লক্ষ্য করছি। তারই অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কিছু উগ্রপন্থিগোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইসলাম প্রচারকারী হক্কানি পীর-আওলিয়ার মাজারে নগ্নভাবে হামলা-ভাঙচুর চালায় এবং মাজারের ওপর পৈশাচিক নৃত্য করতে দেখা যায়। মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হুমকিধামকি দিয়ে ইমাম, খতিব, প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও আলেমদের জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের হামলা ও উগ্রবাদী তৎপরতা শুধু ইসলামের মূল আদর্শের বিরুদ্ধে নয়; বরং এটি আমাদের সমাজের শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য বিনষ্টের একটি নিন্দনীয় প্রচেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ উগ্রবাদী হামলা করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক দোষীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে ৯ দাবি জানানো হয়:
১.পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কেরাত, হামদ-নাত, রচনা প্রতিযোগিতা, ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গরিব-দুঃখীদের আপ্যায়ন, জশনে জুলুসসহ (র্যালি) সকল আয়োজনকে নির্বিঘ্নে ও যথাযথভাবে পালন নিশ্চিত করতে হবে।
২.দ্রুততম সময়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বীর শহীদদের হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত সম্পন্ন করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৩.গণঅভ্যুত্থানে আহতরা এখনো হাসপাতালে অসহায়ভাবে কাতরাচ্ছে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতপূর্বক হতাহতদের পরিবারকে দ্রুত পুনর্বাসনের উদ্যোগ দৃশ্যমান করতে হবে।
৪.বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনসহ স্বজনহারা পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
৫.মসজিদ, মাদ্রাসা ও মাজার শরিফে হামলাকারী উগ্রবাদীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আর অন্যায়ভাবে যেসব ইমাম, খতিব, আলেম-ওলামা ও সম্মানিত শিক্ষকদের কর্মস্থল থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়েছে, তাদের স্বস্থানে স্বপদে অতিদ্রুত পুনর্বহাল করতে হবে।
৬.আহলে সুন্নাতের কেন্দ্রীয় নেতা, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আল্লামা নূরুল ইসলাম ফারুকী (রহ.) হত্যাসহ সকল হত্যাকাণ্ডে দ্রুততম সময়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৭.পতিত জুলুমবাজ ফ্যাসিবাদী সরকারের নীল নকশার শিক্ষাব্যবস্থা বাতিল করে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে কুরআন সুন্নাহর সাথে সমন্বয় সাধন করে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংস করার অশুভ পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে। ট্রান্সজেন্ডারসহ সকল ইসলামবিরোধী পশ্চিমা কনসেপ্ট থেকে পাঠ্য বইগুলোকে মুক্ত করতে হবে।
৮.ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুন্নি মতাদর্শী আলেম ও ব্যক্তিবর্গকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
৯. স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশের ওপর যেকোনো দেশের উপনিবেশ বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আ.ন.ম. মাসউদ হোসাইন আল-কাদেরী, মাওলানা খাজা আরিফুর রহমান তাহেরী, অধ্যাপক এম.এ. মোমেন, মুফতী মাহমুদুল হাসান কাদেরী, মাওলানা মোশারফ হোসেন হেলালী, অধ্যক্ষ আবু জাফর মুহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, অধ্যক্ষ এম ইব্রাহীম আখতারী, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মতিন, গোলাম মাহমুদ ভূইয়া মানিক, অ্যাডভোকেট মোহাম্ম ইকবাল হাসান, মাওলানা এ এম মঈনউদ্দীন চৌধুরী হালিম. মাওলানা আবদুস সালাম, অ্যাডভোকেট হেলাল প্রমুখ।