মহানবী (সা.) যেসব ক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ বলতেন
আলহামদুলিল্লাহ প্রশংসার এক বাক্য। কোরআনের বহু জায়গায় আল্লাহ তাআলা এই শব্দটি উল্লেখ করেছেন।
এর অর্থ সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সবখানে সব জায়গায় সর্ব অবস্থায় একমাত্র প্রশংসা আল্লাহর।
এই বিশ্বাস মুমিন হৃদয় ধারণ করবে। কোনো কিছু পাওয়ার পর, রোগমুক্তি বা কোনো আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি। প্রিয় নবী (সা.) বিভিন্ন শব্দে, দোয়াতে এভাবে আলহামদুলিল্লাহ বলেছেন। যেন আলহামদুলিল্লাহ আমাদের বাস্তব জীবনে মিশে যায়। নিম্নে আমরা সেসব জায়গা নিয়ে আলোচনা করব।
ঘুম থেকে উঠে
ঘুম থেকে উঠেই রাসুল (সা.) সর্বপ্রথম আল্লাহর প্রশংসা করতেন। ঘুম মৃত্যুতুল্য। এই ঘুম থেকে আর না-ও জাগতে পারতাম আমরা। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার অশেষ কৃপায় তিনি আমাদের আবার জেগে ওঠার তাওফিক দান করেছেন। এজন্য প্রিয় নবী (সা.) আমাদের এ দোয়া শিখিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন তিনি বলতেন, উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বিসমিকা আহইয়া ওয়া বিসমিকা আমুতু। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার নামেই জীবিত আছি আর তোমার নামেই মৃত্যুবরণ করছি। ’
আর যখন তিনি ঘুম থেকে সজাগ হতেন তখন বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লা-হিল্লাজি আহইয়া-না- বা-দা মা-আমা-তানা-ওয়া ইলাইহিন নুশুর’।
অর্থাৎ ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, যিনি আমাদের মৃত্যুবরণের পর জীবিত করছেন। আর তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৮০)
খাবার খাওয়ার পর
প্রিয় নবী (সা.) খাবারের পর আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কোনো কিছু খেয়ে অথবা কিছু পান করে বান্দা আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করলে অবশ্যই তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮১৬)
মুআজ ইবনে আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে লোক আহার করার পর বলে, উচ্চারণ : ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানি হাজা ওয়া রাজাকানিহি মিন গায়রি হাওলিন মিন্নি ওয়ালা কুওওয়াহ’। অর্থ : সব প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি আমাকে এটা আহার করিয়েছেন এবং এটা আমাকে রিজিক দিয়েছেন, আমার তা লাভ করার প্রচেষ্টা বা শক্তি ব্যতীত, তার আগের সব অপরাধ ক্ষমা করা হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫৮)
হাঁচি দেওয়ার পর
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি হাঁচি দেয়, তখন সে যেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে। (বুখারি, হাদিস : ৬২২৪)
আয়না দেখার সময়
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আয়না দেখার সময় এই দোয়া পড়তেন। উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা হাসসানতা খালকি, ফাহাসসিন খুলুকি। অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার চেহারায় সৌন্দর্য দিয়েছেন। অতএব, আমার চরিত্রেও সৌন্দর্য দান করুন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৩৯২)
কাজের সূচনায়
আমার প্রতিটি কাজের সূচনা যেন আলহামদুলিল্লাহ দিয়েই হয়। এবং এই আলহামদুলিল্লাহ বলে কাজ শুরু করার মাঝে মুমিন আনন্দ বোধ করে। অন্তরে এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিটি কাজ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর প্রশংসা ছাড়া শুরু করা হলে, তা হয় বরকতশূন্য। (ইবনে মাজা, হাদিস : ১৮৯৪)
বিপদাক্রান্ত কাউকে দেখলে
অসুস্থ বিপদগ্রস্ত খারাপ অবস্থায় কাউকে দেখলে রাসুল (সা.) আল্লাহর প্রশংসা করতে বলেছেন। ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে লোক কোনো বিপদগ্রস্ত লোককে প্রত্যক্ষ করে বলে, উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আ-ফা-নি মিম্মাব তালা-কা বিহি ওয়া ফাজজালানি আলা কাসিরিম মিম্মান খলাকা তাফজিলা।
অর্থ : সব প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, তিনি যে বিপদে তোমাকে জড়িত করেছেন তা হতে আমাকে হিফাজতে রেখেছেন এবং তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির ওপর আমাকে সম্মান দান করেছেন, সে তার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত উক্ত অনিষ্ট হতে হিফাজতে থাকবে। তা যেকোনো বিপদেই হোক না কেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৩১)
শৌচাগার থেকে বের হয়ে
নবীজি (সা.) শৌচাগার থেকে বের হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলতেন। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) শৌচাগার থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন—উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।
অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার থেকে কষ্ট দূর করেছেন এবং স্বস্তি দান করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০১)