শিক্ষা

মাধ্যমিকে ফিরছে বিজ্ঞান-মানবিক-ব্যবসায় শিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এ বছর থেকে নবম শ্রেণিতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা ইত্যাদি শাখা) বিভাজন তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার নতুন শিক্ষাক্রমের এই বিষয়টিসহ অনেক কিছু বাদ দিয়ে আবারও মাধ্যমিকে বিভাজন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব শিক্ষার্থী আগামী বছর নবম শ্রেণিতে উঠবে তারা পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক পরিমার্জিত পাঠ্যবই (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) পাবে। তারা আগের মতো নবম ও দশম মিলিয়ে দুই শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যসূচি শেষ করে ২০২৭ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেবে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে এতথ্য জানানো হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ এর বিষয়ে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা তথা অংশীজনদের অভিমত, গবেষণা ও জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার প্রকট অভাব ইত্যাদি নানাবিদ বাস্তব সমস্যা বিদ্যমান থাকায় এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন যোগ্য নয় বলে প্রতীয়মান। এই পরিপ্রেক্ষিতেই এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে তারা আগামী জানুয়ারিতে দশম শ্রেণিতে উঠবে। তাদের বিষয়ে পরিপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা (২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয়) নেওয়ার লক্ষে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা অব্যাহত রেখে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যবইগুলো (২০২৩ সালে ব্যবহৃত বই) শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। বিভাগভিত্তিক এই পাঠ্যবইগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি তৈরি করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা এক শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই পাঠ্যসূচি শেষ করতে পারে। একেবারে সহজ করে বললে এখন যেসব শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে পড়ছে তারাও বিভাগ বিভাজনের মাধ্যমেই এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তাদের পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে হবে। অর্থাৎ এত দিন ধরে যেভাবে পরীক্ষা হয়েছে, সেভাবেই হবে।

অন্যদিকে এ বছরের বাকি সময়ে ও বার্ষিক পরীক্ষায় ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে।

শ্রেণি কার্যক্রমগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির প্রতিটির ছয়টি করে বিষয়ভিত্তিক যে মূল্যায়ন কার্যক্রম বাকি রয়েছে সেগুলো আর অনুষ্ঠিত হবে না। মানে ষাণ্মাসিক বা অর্ধবার্ষিকীর বাকি মূল্যায়ন হচ্ছে না। সংশোধিত ও পরিমার্জন করা মূল্যায়ন রূপরেখার ভিত্তিতে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এ বছরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা হবে। সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতির রূপরেখা শিগগির বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে।

তবে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চলমান পাঠ্যপুস্তকগুলো এ বছর বহাল থাকবে। কিন্তু ২০২৫ সালে যথাসম্ভব সংশোধিত ও পরিমার্জন করা পাঠ্যবই সরবরাহ করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে ইতিমধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। এ ক্ষেত্রে যত দূর সম্ভব মূল্যায়ন পদ্ধতি জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর মতো হবে। মানে পরীক্ষাই প্রাধান্য পাবে।

পরিপত্রে বলা হয়, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ২০২৫ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে, যা ২০২৬ সাল থেকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের শুরুতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছিল। এ বছর (২০২৪) আরও চারটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়। শ্রেণিগুলো হলো দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল। এরপর ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালুর হওয়ার কথা ছিল নতুন শিক্ষাক্রমে। নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নসহ অনেক বিষয়েই বড় পরিবর্তন আনা হয়েছিল।

এর মধ্যে অন্যতম পরিবর্তনটি ছিল এ বছর থেকে মাধ্যমিকে বিভাগ বিভাজন উঠিয়ে দেওয়া হয়। নতুন এই নিয়মে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এত দিন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়ে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা ইত্যাদি নামে আলাদা বিভাগ অর্থাৎ বাধ্যতামূলক কয়েকটি বিষয়ের পাশাপাশি গুচ্ছভিত্তিক বিশেষায়িত কয়েকটি বিষয় পড়তে হতো। আর এটি বাস্তবায়ন হলে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হতো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরোনো নিয়ে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তারপর থেকেই নতুন শিক্ষাক্রম বাদ বা অনেক কিছু পরিবর্তনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এখন এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করে সরকারের অবস্থান জানাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d